সাইক্লোন, হ্যারিকেন ও টর্নেডোর মধ্যকার পার্থক্য
সুপার সাইক্লোন ‘ফণী’ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে না যেয়ে সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর আগেও এ অঞ্চলে বেশ কয়েকবার আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড়। প্রতিটি ঝড়ের পৃথক পৃথক নাম রয়েছে। সাইক্লোন, হ্যারিকেন ও টর্নেডোর বলা হয়ে থাকে এসবকে। চলুন এবার তাহলে এসবের পার্থক্য জেনে নেওয়া যাক-
হ্যারিকেন, সাইক্লোন ও টাইফুনে: সাইক্লোন, হ্যারিকেন ও টাইফুন মূলত একই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও তাদের ডাকা হয় ভিন্ন নামে। শুধু উৎপত্তিস্থলের ওপর ভিত্তি করেই তাদের এই ভিন্ন নাম।
সাধারণত আটলান্টিক ও উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে উৎপত্তি হওয়া ঝড়গুলোকে হ্যারিকেন নামে ডাকা হয়। একই ধরণের ঝড়ের যখন দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে উৎপত্তি হয় তখন সেগুলোকে বলে টাইফুন এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরে উৎপন্ন হলে তার নাম হয় সাইক্লোন।
ট্রপিকাল সাইক্লোন ও সাইক্লোন: ট্রপিকাল সাইক্লোন শব্দটি একটি জেনেরিক টার্ম যেটি সাধারণত আবহাওয়াবিদরা ট্রপিক্যাল ও সাবট্রপ্রিকাল অঞ্চলের সংগঠিত, ঘূর্ণায়মান মেঘ ও বজ্রপাতের বর্ণনা দিতে ব্যবহার করে থাকে। ট্রপিকাল সাইক্লোনের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ৭৪ মাইল বা তার বেশি হয় তখন উৎপত্তিস্থল অনুযায়ী এর নাম হয় হ্যারিকেন, সাইক্লোন অথবা টাইফুন। পৃথিবীর যে স্থানে সাইক্লোনের উৎপত্তি হয় সেই উৎপত্তি স্থল অনুযায়ী নামকরণ করা হয়। উত্তর গোলার্ধে ট্রপিকাল সাইক্লোন সাধারণত ঘড়ির কাটার উল্টোদিকে ঘোরে।
সাইক্লোনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য:
নিম্নচাপ: ঘণ্টায় ৩৮ মাইল বা তার নিচের গতিবেগের ঝড়কে ক্রান্তীয় নিম্নচাপ বলে।
মাঝারি ঝড়: ঘণ্টায় ৩৯ থেকে ৭৩ মাইল গতিবেগের ঝড়কে মাঝারি গতিবেগের ক্রান্তীয় ঝড় বলে।
হ্যারিকেন/সাইক্লোন: ঘণ্টায় ৭৪ মাইল গতিবেগ অথবা তার চেয়ে বেশি গতির ক্রান্তীয় ঝড়কে হারিকেন বা সাইক্লোন বলা হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল বিশেষ করে জাপান, কোরিয়া ও এশিয়ার পূর্বাঞ্চলে এই ঝড় টাইফুন নামে পরিচিত হলেও একই গতিবেগের ঘূর্ণিঝড় দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরে সাইক্লোন নামে ডাকা হয়।
বড় ধরণের সাইক্লোন/হ্যারিকেন: ঘণ্টায় ১১১ মাইল বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ঘূর্ণিঝড়কে এই ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়।
টর্নেডো: অনেকটা মাছের ঝাঁকের মতো দেখতে চক্রাকার বায়ুর কুণ্ডলি হলো টর্নেডো। হ্যারিকেন বা সাইক্লোনের মতো কোনো ধরণের পূর্বাভাস ছাড়াই হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়। মুহূর্তে সবকিছু তছনছ করে আবার থেমে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে টর্নেডোর সৃষ্টি হয় স্থলভাগে। নাসার গদা ইনস্টিটিউট অব স্পেস স্টাডিজের আবহাওয়াবিদ ডেল জেনিও বলেন, টর্নেডোর কারণ এখনো আমাদের বোধগম্যতার বাইরে।
সাইক্লোন বা হারিকেনের মতো সময় না নিয়ে দ্রুত ঘটে যাওয়ায় আগে থেকে টর্নেডো সম্পর্কে খুব একটা ধারণা পাওয়া যায় না।
টর্নেডো ও হারিকেনের মধ্যে পার্থক্য:
স্থান: টর্নেডো সাধারণত স্থলভাগের ওপর তৈরি হয়, তবে অধিকাংশ সাইক্লোনই সমুদ্রে সৃষ্টি হয়।
আকার আকৃতি: সবচেয়ে বড় আকারের সাইক্লোনগুলো প্রায় চার কিলোমিটার আকারের দেখা গেছে, যেখানে টর্নেডোর সর্বোচ্চ আকার শূন্য দশমিক ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
লাইফ সাইকেল: টর্নেডো কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তার ধ্বংসযজ্ঞ শেষ করে গতি হারিয়ে ফেললেও সাইক্লোন সাধারণত কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
গতিবেগ: বাতাসে টর্নেডোর গতিবেগ ৪৮৩ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। যেখানে সবচেয়ে শক্তিশালী সাইক্লোন বা হ্যারিকেনের গতিবেগ ৩২২ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় গুলোর কেনো ভিন্ন ভিন্ন নামকরণ করা হয়: বিভিন্ন ঝড়ের নামকরণ ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিকাল অর্গানাইজেশনের একটি পদ্ধতি। ন্যাশনাল ওশান অ্যান্ড অ্যাটওমোসফেয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ)’র ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঝড়গুলোর নামকরণে কোনো ভূমিকা পালন করে না।
আটলান্টিক মহাসাগরিও ঝড়ের জন্য তাদের কিছু নারী ও পুরুষের নামের তালিকা রয়েছে, প্রতি ছয় বছর পর পর তারা সেগুলো পালাক্রমে ব্যবহার করে। তবে অতি তীব্র মাত্রার এবং যে ঝড়গুলো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেগুলোর নামে পরবর্তীতে আর কোনো ঝড়ের নামকরণ করা হয় না। সাধারণত প্রতি মৌসুমে অন্তত ২১ টারও বেশি ঘূর্ণিঝড় হলে পরবর্তী ঝড়গুলোকে গ্রীক বর্ণমালা দিয়ে নামকরণ করা হয়।