ডাকসুর আলোচনায় ফিরে এল পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি মহিউদ্দিনের বিজয়ের ইতিহাস
বাংলাদেশের অন্যতম অগ্রগণ্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)। এর প্রাণপুরুষ ও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদ। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে হঠাৎ ফিরে এসেছে মহিউদ্দিন আহমেদের ছাত্রজীবনের স্মৃতি। তাঁর মেয়ে মাহরুখ মহিউদ্দিন এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, পাকিস্তান শাসনামলে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জিএস (সাধারণ সম্পাদক) হয়েছিলেন তাঁর বাবা। তিনি ছিলেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও একমাত্র নির্বাচিত বাঙালি ছাত্রনেতা।
মাহরুখ তাঁর পোস্টে পুরোনো পত্রিকার ৩টি কাটিং শেয়ার করে লিখেছেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে করতে মনে হলো ১৯৬৬ সালের উত্তাল সময়ে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কয়েকটা ক্লিপ শেয়ার করি। সেদিন শহীদ মিনারে বসে আনু মুহাম্মদ স্যার বিষয়টা মনে করিয়ে দিলেন, তাই বাবার স্মৃতি ঘাঁটতে ইচ্ছে হলো।’
তিনি আরও লিখেছেন, প্রায় আকস্মিকভাবে বন্ধুদের উৎসাহে মহিউদ্দিন আহমেদ প্রার্থী হয়েছিলেন। বিতার্কিক হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল এবং নারী শিক্ষার্থীদের মাঝেও জনপ্রিয় ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র হয়েও তিনি ১৯৬৬ সালে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং বিপুল ভোটে জয়ী হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন খলিলুর রেহমান রামদে, যিনি পরে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হন। নির্বাচনে পরাজয়ের সেই স্মৃতি তিনি পরবর্তীতে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছিলেন।
মাহরুখ তাঁর লেখায় আরও উল্লেখ করেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের সময় এসেছে। এজন্য ইতিহাস সংরক্ষণ জরুরি। তিনি জানান, ১৯৬৭ সালে মাহফুজা খানম ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন, যিনি সম্প্রতি মারা গেছেন।
১৯৪৪ সালে ফেনীর পরশুরামে জন্মগ্রহণ করেন মহিউদ্দিন আহমেদ। নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনা করেন। পরে পাকিস্তান কাউন্সিল স্কলারশিপ নিয়ে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন এবং স্নাতকোত্তর শেষে পাকিস্তান টাইমসে সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি তাঁকে ‘পাবলিশিং ম্যানেজমেন্ট’-এ কালচারাল ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের পাকিস্তান শাখায় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে দুই বছর ওইউপির ঢাকা অফিসের প্রধান নির্বাহী ছিলেন। ১৯৭৫ সালে ওইউপি ঢাকা অফিস বন্ধ হয়ে গেলে করাচিতে চাকরির প্রস্তাব পান, কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে সেখানে থাকতে অস্বীকার করেন।
পরবর্তীতে তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)। প্রতিষ্ঠানটি পাঠ্যপুস্তক, গবেষণাধর্মী গ্রন্থ এবং আন্তর্জাতিক মানের রচনা প্রকাশ করে খ্যাতি অর্জন করে। ইউপিএল বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হয়ে ওঠে।
২০২১ সালের ২২ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের প্রকাশনা অঙ্গনে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।