১২ আগস্ট ২০২৫, ২১:৫০

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক: প্রথম দুই মিনিটেই ‘মন বোঝার’ খেলা

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় ট্রাম্প ও পুতিন বৈঠক   © সংগৃহীত

আগামী শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় হতে যাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের বহুল আলোচিত বৈঠক। বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক নির্ধারণ করে দিতে পারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ গতিপথ। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছে না কেবল যুদ্ধ—বরং আলোচনার ধরন, স্থান ও রাজনৈতিক ইঙ্গিতও নজর কাড়ছে আন্তর্জাতিক মহলের। তবে ট্রাম্প বলছেন, পুতিনের মন বুঝে তিনি এই গতিপথ নির্ধারণ করতে চান মাত্র দুই মিনিটে।

দুই মিনিটেই সিদ্ধান্ত?
সোমবার হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প জানান, পুতিনের উদ্দেশ্য বোঝার জন্য তাঁর প্রয়োজন মাত্র দুই মিনিট। ‘আমি প্রথম দুই মিনিটেই বুঝে যাব, সে কী চায়। যদি দেখি কোনো সমাধান সম্ভব নয়, তাহলে উঠে চলে আসব,’ বলেন ট্রাম্প। তাঁর মতে, যুদ্ধ থামাতে হলে দ্রুত সিদ্ধান্তই একমাত্র পথ। যদিও এতে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে তিনি কিছু বলেননি।

বৈঠকের ‘রহস্যময়’ স্থান
আলাস্কায় এই বৈঠক হতে যাচ্ছে এমন একটি স্থানে, যা ১৮৬৭ সালে মাত্র ৭২ লাখ ডলারে রাশিয়ার কাছ থেকে কিনেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ঐতিহাসিক এই স্থানেই ট্রাম্প এখন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ‘ভূমি বিনিময়’-এর আলোচনা করতে চান। এই বক্তব্য অনেককেই ভাবিয়ে তুলেছে—বিশেষ করে ইউক্রেনের নেতা ভলোদিমির জেলেনস্কিকে, যিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘যেকোনো আলোচনা শুরু হতে হবে যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে।’

ইউক্রেন এখনো আমন্ত্রিত নয়
আলাস্কার বৈঠকে এখনো ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবুও তিনি প্রতিক্রিয়ায় বলেন, কোনো চুক্তিই গ্রহণযোগ্য নয় যদি তা যুদ্ধ চলার মধ্যেই হয়। তাঁর মতে, আলোচনা চলাকালীন বিমান হামলা ও ভূমি দখল চলতে থাকলে তা একপ্রকার প্রতারণাই হবে।

আরও পড়ুন: ‘চাঁদা তুললে পুরস্কার, ধরা পরলে বহিষ্কার ও ভাইরাল হলে গ্রেপ্তার’

ট্রাম্পের ‘নীরবতা’ ইউক্রেন ইস্যুতে
হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে বারবার পুতিনের অবস্থান নিয়ে কথা বললেও ট্রাম্প ইউক্রেনের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, অস্ত্র সহায়তা বা ভবিষ্যৎ রাশিয়ান আগ্রাসন ঠেকাতে কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। রিপাবলিকান শিবিরের অনেকেই এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ, এর আগে জাতিসংঘে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রস্তাবেও ট্রাম্প সমর্থন দেননি। এমনকি ইউক্রেনের আগ্রাসনের জন্য ইউক্রেনকেই দায়ী করেন তিনি।

পুতিনের পরিকল্পনা ও রিপাবলিকানদের শঙ্কা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুতিনের লক্ষ্য হতে পারে আলোচনাকে দীর্ঘায়িত করা এবং ট্রাম্পকে প্রভাবিত করে তাঁর অবস্থান নিজের পক্ষে টেনে আনা। রিপাবলিকান দলের ভেতরেও এই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, আলোচনার মাধ্যমে ট্রাম্পের মন জয় করে পুতিন হয়তো যুদ্ধের পক্ষে আরও সুবিধাজনক কোনো অবস্থান আদায় করে নিতে পারেন।

ইউরোপীয় মিত্রদের বার্তা
বৈঠকের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইউক্রেনে সরাসরি মার্কিন অর্থায়ন বন্ধ করা হচ্ছে। এখন ইউরোপীয় মিত্ররাই যদি চায়, তাদেরই ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র কিনে দিতে হবে। এই অবস্থান ইউক্রেনের কৌশলগত অবস্থানকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আলাস্কার বৈঠক আপাতদৃষ্টিতে মাত্র কয়েক মিনিটের মনস্তাত্ত্বিক লড়াই মনে হলেও, এর প্রভাব হতে পারে বহু বছরের ভূরাজনীতিতে। ট্রাম্পের ‘দুই মিনিটে চুক্তি না হলে উঠে আসা’ আর পুতিনের সময়ক্ষেপণের কৌশলের মাঝে ইউক্রেনের ভাগ্য কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস