ট্রাম্প-চাপে পিষ্ট ভারতের পাশে রাশিয়া
রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করার কারণে ভারতীয় পণ্যে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। এর ফলে ২৭ অগস্ট থেকে ভারতকে আমেরিকায় পণ্য রফতানি করতে হলে ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ শুল্কনীতির বিরোধিতা করে ভারতের পাশে দাঁড়াল রাশিয়া।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়েছে, সার্বভৌম কোনও দেশের স্বাধীনভাবে বাণিজ্যসঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে। ট্রাম্প বিভিন্ন দেশকে হুমকি দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য করছেন বলেও দাবি করেছে মস্কো।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করার জন্য বুধবার ভারতীয় পণ্যে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। এর ফলে আগামী ২৭ আগস্ট থেকে ভারতকে আমেরিকায় পণ্য রফতানি করতে হলে ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখা হলে দেশগুলোর ওপর আরও অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।
এ পরিস্থিতিতে মস্কোর বক্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ক্রেমলিনে রুশ প্রশাসনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “আমরা অনেক বিবৃতির কথাই শুনছি, যেগুলো আসলে হুমকি। বিভিন্ন দেশকে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য করা হচ্ছে। আমরা এ বিবৃতিগুলিকে বৈধ এবং ন্যায্য বলে মনে করছি না।’
একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, আমরা বিশ্বাস করি, কোনও সার্বভৌম দেশের স্বাধীনভাবে বাণিজ্যসঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে। নির্দিষ্ট কোনও দেশের জাতীয় স্বার্থ অনুযায়ী এ বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক বোঝাপড়া হয়ে থাকে।’ পেসকভের বক্তব্যে কোথাও ভারতের নাম না-করা হলেও পুতিনের দেশ যে ট্রাম্পের শুল্কবাণের বিরুদ্ধে নয়াদিল্লির পাশে দাঁড়াচ্ছে, তা স্পষ্ট।
আরও পড়ুন: শিক্ষককে ফাঁসাতে স্কুলের চৌবাচ্চায় বিষ, কর্ণাটকের ১১ শিশু হাসপাতালে
২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল রাশিয়া। এখনও পূর্ব ইউরোপে দুই দেশের যুদ্ধ চলছে। রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিবাদে আমেরিকাসহ পশ্চিমি বিশ্ব তাদের ওপর একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে রুশ বাণিজ্য যে কারণে বড়সড় ধাক্কা খায়। সে সময়ে তারা সস্তায় খনিজ তেল বিক্রি শুরু করে। জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে রাশিয়া থেকে তেল কেনা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল ভারত।
ভারত সারা তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ। রাশিয়া থেকে ৩৫ শতাংশ তেল নয়াদিল্লি আমদানি করে। এতেই আপত্তি আমেরিকার। তাদের দাবি, ভারত রাশিয়া থেকে তেল এবং অস্ত্র কেনার ফলে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সুবিধা হচ্ছে পুতিনের। এতে যুদ্ধে অর্থসাহায্য হচ্ছে। অবিলম্বে এ বাণিজ্য বন্ধের জন্য ভারতকে চাপ দেয় আমেরিকা।
ট্রাম্পের হুমকির কাছে মাথা নত করেনি নয়াদিল্লি। প্রথম থেকেই দেশটির অবস্থান স্পষ্ট। বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, জাতীয় স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক বাজারদরের কথা মাথায় রেখে ভারত তার বাণিজ্যনীতি নির্ধারণ করে। বাজারে কে কত দাম নিচ্ছে, তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
রাশিয়া সস্তায় তেল বিক্রি করে বলেই ভারত কেনে। ভারত ট্রাম্পের শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায্য’ বলে দাবি করার পরে এবার ‘পুরোনো বন্ধু’র পাশে দাঁড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করল রাশিয়া।