মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার, ডিসেম্বরে নির্বাচনের ঘোষণা
মিয়ানমারে তিন বছর ধরে চলা জরুরি অবস্থা বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করেছে দেশটির সামরিক জান্তা। একইসঙ্গে ডিসেম্বরে বহুদলীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি আরও জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
জান্তার মুখপাত্র জাও মিন তুন সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক ভয়েস মেসেজে জানান, ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে নির্বাচন আয়োজনের জন্য আজ থেকে জরুরি অবস্থা বাতিল করা হলো।’ তিনি বলেন, ‘ছয় মাসের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির জনপ্রিয় নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়ে সামরিক বাহিনী জরুরি অবস্থা জারি করেছিল। এরপর থেকেই দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা ও গৃহযুদ্ধ এতে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
জরুরি অবস্থার মাধ্যমে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং নির্বাহী, বিচার বিভাগ ও আইনসভা—তিনটি প্রধান ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি নির্বাচনকে সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার ‘সম্ভাব্য পথ’ হিসেবে উপস্থাপন করছেন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এমআরটিভির খবরে বলা হয়েছে, নির্বাচনের জন্য ১১ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন মিন অং হ্লাইং নিজেই। তিনি ‘অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি’র দায়িত্বে থেকে নির্বাচন তদারকি করবেন।
তবে নির্বাচনের নির্ধারিত তারিখ এখনো ঘোষণা করেনি জান্তা সরকার। এর মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারে প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।
নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ঘিরে নতুন একটি আইনও পাস করেছে সামরিক সরকার, যেখানে বলা হয়েছে—যারা নির্বাচনী কার্যক্রম ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখবে, সংগঠন গড়ে তুলবে, উসকানি বা প্রতিবাদ করবে কিংবা এ সংক্রান্ত কোনো প্রচারপত্র বিতরণ করবে, তাদের তিন থেকে দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে। একই আইনে বলা হয়েছে, কেউ যদি নির্বাচন কমিশনের কর্মী, প্রার্থী বা ভোটারদের ভয় দেখায়, বাধা দেয়, নির্যাতন করে বা গুরুতর ক্ষতি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি হতে পারে।
তবে নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন তুলেছে দেশটির প্রধান বিরোধী দলগুলো। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে যেসব নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের অপসারণ করা হয়েছিল, তারা এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি এই নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, নির্বাচনকে ঘিরে নতুন করে বিদ্রোহীরা হামলা বা প্রতিরোধ শুরু করতে পারে। অন্যদিকে, জান্তা সরকার এ মাসেই ঘোষণা দিয়েছে, যারা অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করে ‘আইনের আওতায়’ ফিরে আসবে, তাদের নগদ পুরস্কার দেওয়া হবে।
নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত বছর দেশব্যাপী একটি জনগণনা পরিচালনা করেছিল সামরিক সরকার। তবে প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, ৫১ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১৯ মিলিয়নের তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতিকে এই ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে সরকারপক্ষ।
(তথ্যসূত্র: ফ্রান্স ২৪, এএফপি, এপি, রয়টার্স)