ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ: কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ শিক্ষার্থীর ডিগ্রি বাতিল-বহিষ্কার-শাস্তি
গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৮০ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার, সাময়িক বহিষ্কার এবং অ্যাকাডেমিক ডিগ্রি বাতিলসহ কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র অধিকার সংগঠন ‘কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি অ্যাপারথেইড ডিভেস্ট’ (CUAD) জানায়, তিন বছর পর্যন্ত কোর্সে বহিষ্কার, স্থায়ী বহিষ্কার ও ডিগ্রি বাতিলসহ বিভিন্ন শাস্তি পেয়েছেন এই শিক্ষার্থীরা। সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসরায়েলের সঙ্গে সকল আর্থিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার দাবি তুলে আন্দোলনে অংশ নেয়।
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) এক বিবৃতিতে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, ২০২৫ সালের মে মাসে বাটলার লাইব্রেরি দখল এবং ২০২৪ সালের বসন্তকালে অ্যালামনাই উইকেন্ড চলাকালে ক্যাম্পাসে শিবির স্থাপন করার ঘটনায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটানো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের লঙ্ঘন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের পরিণাম অবশ্যই ভোগ করতে হবে।’
সিইউএডির পক্ষ থেকে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের ওপর আরোপিত এই শাস্তি অতীতের ‘টিচ-ইন’ বা অন্যান্য বিল্ডিং দখল আন্দোলনের শাস্তির তুলনায় অনেক বেশি কঠোর। সংগঠনটি আরও জানায়, ‘আমরা দমে যাব না। ফিলিস্তিনি মুক্তির সংগ্রামে আমরা অটল থাকব।’
২০২৪ সালে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা প্রো-প্যালেস্টাইন আন্দোলন বিশ্বব্যাপী নজির স্থাপন করে। আন্দোলন দমন করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিউইয়র্ক পুলিশকে ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি দিলে বহু শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। দমন-পীড়নের পরও গত মে মাসে ফাইনাল পরীক্ষার সময় বাটলার লাইব্রেরি দখল করে শিক্ষার্থীরা। তারা ইসরায়েলি সামরিক শিল্প সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার এবং গাজায় নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংহতি জানায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জুডিশিয়াল বোর্ড জানায়, ‘রিডিং পিরিয়ডে ব্যাঘাত’ ঘটানোর অভিযোগে বহিষ্কার, সাসপেনশন ও ডিগ্রি বাতিল করা হয়েছে। নির্দিষ্টভাবে কতজন শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত হয়েছেন তা তারা জানায়নি, তবে এটিই ছিল সেই সময়ের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফেডারেল তহবিল পুনরুদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি ইহুদি শিক্ষার্থীদের ‘গভীর ও ধারাবাহিক হয়রানি’ থেকে যথাযথভাবে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
গত মে মাসে গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও সাবেক ট্রাস্টি ক্লেয়ার শিপম্যান শিক্ষার্থীদের তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়েন। তিনি প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভ দমনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য আইভি লিগ প্রতিষ্ঠানও সরকার কর্তৃক বাজেট সংকোচনের মুখে পড়েছে। তবে হার্ভার্ড এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, মঙ্গলবার কলাম্বিয়ার ঘোষণা দেওয়া নতুন শাস্তির দিনে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অবরোধে আবারও শিশুসহ অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়। তাদের অধিকাংশই অনাহার ও অপুষ্টিতে ভুগছিল বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ। [সূত্র: আলজাজিরা]