১৩ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩১

ইসরায়েলি হামলায় খাবারের অপেক্ষায় দাঁড়ানো ৩৪ জনসহ গাজায় আরও ১১০ ফিলিস্তিনি নিহত

নিহতদের লাশের সারি  © সংগৃহীত

গাজার রাফাহ শহরে সহায়তার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৩৪ জনসহ একদিনে নিহত হয়েছেন ১১০ জন ফিলিস্তিনি। শনিবার (১২ জুলাই) এই হামলার ঘটনা ঘটে। রবিবার (১৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ-এর সামনে খাবার সংগ্রহের জন্য অপেক্ষমাণ অবস্থায় এই হামলায় প্রাণ হারান ৩৪ জন। প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি সহায়তা সংস্থা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসরায়েলি সেনারা সরাসরি লাইনের ওপর গুলি চালায়। বেঁচে ফেরা সামির শায়াত নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘খাবার নেওয়ার ব্যাগটাই শেষমেশ মরদেহ মোড়ানোর কাপড় হয়ে গেল। ওরা আমাদের মৃত্যুফাঁদে ফেলেছে।’

আরেকজন আহত ব্যক্তি মোহাম্মদ বারবাখ জানান, গুলি চালিয়েছে স্নাইপাররা। ‘খাবার নিতে দিয়ে পরে গুলি চালিয়েছে—যেমন করে শিকারি হাঁসকে টার্গেট করে’ বলেন তিনি।

আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম জানান, গুলি চালানোর আগে কোনো সতর্কবার্তাও দেয়নি ইসরায়েলি বাহিনী। বর্তমানে রাফাহ শহরে কেবল একটি সহায়তা কেন্দ্র চালু রয়েছে, ফলে হাজার হাজার মানুষ সেখানে ভিড় করছেন।

গাজার চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ জানায়, মে মাসের শেষ থেকে জিএইচএফ কেন্দ্রগুলোতে এখন পর্যন্ত ৮০০ জনের বেশি নিহত এবং ৫ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের বেশিরভাগেরই মাথা ও পায়ে গুলি লেগেছে।

আল-আকসা হাসপাতালের মুখপাত্র খালিল আল-দেগরান বলেন, ‘আমরা এই চাপ নিতে পারছি না। চিকিৎসাসামগ্রীর ঘাটতি চরম পর্যায়ে।’

অন্যদিকে, গাজার তুফাহ এলাকায় জাফা স্ট্রিটে একটি বাড়িতে বোমা হামলায় ৪ জনসহ নিহত হয়েছেন আরও ১৪ জন। জাবালিয়া, শাতি শরণার্থী শিবির ও বেইত হানুন শহরেও একাধিক হামলা হয়েছে। আইডিএফ জানিয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় তারা গাজায় ২৫০টিরও বেশি হামলা চালিয়েছে।

এদিকে অপুষ্টিতে মৃত্যুর মিছিলও চলছে। গাজায় এখন পর্যন্ত ৬৭ জন শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে। স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ বছরের কম বয়সী সাড়ে ছয় লাখ শিশু এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।

এ পরিস্থিতির মধ্যেই থমকে গেছে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনা। মূল বাধা—ইসরায়েলি বাহিনী গাজার কোন কোন এলাকা থেকে সরে যাবে, সেই মানচিত্র নিয়ে।

হামাস বলছে, প্রস্তাবিত মানচিত্র অনুযায়ী রাফাহসহ গাজার প্রায় ৪০ শতাংশ অঞ্চল ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, যা তারা মেনে নেবে না। হামাসের এক প্রতিনিধি বলেন, ‘এই মানচিত্র মেনে নিলে গাজার অর্ধেক আবারও দখলদার অঞ্চলে পরিণত হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো হস্তক্ষেপ ছাড়া এই অচলাবস্থা কাটানো কঠিন বলেও মত দিয়েছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা। তবে আলোচনা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। কাতারে রোববার থেকে আবারও বৈঠকে বসবে হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিদল। [সূত্র: আল জাজিরা]