ইসরায়েলের হামলায় গাজায় খাদ্যের অপেক্ষায় থাকা ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরাসহ নিহত ৭২
গাজায় ইসরায়েলের রাতভর বিমান হামলায় আরও অন্তত ৭২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শনিবার (২৮ জুন) রাতভর চলা এই হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের মুওয়াসি এলাকায় একটি শরণার্থী শিবিরের তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলায় তিন শিশুসহ একই পরিবারের পাঁচ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন।
এছাড়া গাজা সিটির ফিলিস্তিন স্টেডিয়ামের কাছে আশ্রয় নেওয়া গৃহহীনদের ওপর হামলায় নিহত হয়েছেন আরও ১২ জন। আস-শিফা হাসপাতালের কর্মীরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। শনিবার দুপুরে গাজার পূর্বাঞ্চলে সড়কপথে এক হামলায় ১১ জন এবং মধ্যাঞ্চলের বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের প্রবেশপথে জনসমাগমে চালানো হামলায় নিহত হয়েছেন আরও দুজন। এই তথ্য দিয়েছে আল-আওদা হাসপাতাল।
এদিকে, দীর্ঘ ২১ মাসের এই যুদ্ধের মধ্যে আশার আভাস দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানান, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে আগামী সপ্তাহেই একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি হতে পারে। শুক্রবার এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমরা গাজা পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছি এবং এর একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজছি।”
এর আগে মার্চে স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে ইসরায়েল আবারও গাজায় হামলা শুরু করে। তারপর থেকে একাধিকবার যুদ্ধবিরতির চেষ্টা হলেও আলোচনা স্থবির হয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেই নতুন করে আলোচনার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, হামাসের হাতে জিম্মি থাকা প্রায় ৫০ জনের মুক্তি এই আলোচনার অন্যতম ইস্যু হতে পারে। যদিও এদের অনেকেই হয়ত আর জীবিত নেই।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৫৬ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে শুধু মার্চের যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর থেকে নিহত হয়েছেন ৬,০৮৯ জন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। ইসরায়েল দাবি করে, তারা কেবল সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। তবে হামাস সাধারণ মানুষের ভিড়ে লুকিয়ে থাকে বলে বেসামরিক প্রাণহানির জন্য তারা দায়ী নয়।
গাজায় দ্বিতীয় দফায় তীব্র মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। মে মাস থেকে সীমিত পরিসরে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও সেই ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়েই বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, খাদ্য সংগ্রহের সময় ইসরায়েলি গুলিতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৫০০ জন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসরায়েলি সেনারা ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে। সেনাবাহিনী যদিও দাবি করেছে, তারা কেবল সতর্কতামূলক গুলি চালিয়েছে এবং ঘটনাগুলো তদন্তাধীন। [সূত্র: আল জাজিরা]