২৫ জুন ২০২৫, ২০:৪৯

প্যালেস্টাইন অ্যাকশন: ইসরায়েলবিরোধী সংগঠন কেন নিষিদ্ধ হচ্ছে?

‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপের স সদস্যদের বিক্ষোভ  © ফাইল ছবি

যুক্তরাজ্যে ইসরায়েলবিরোধী সরাসরি অ্যাকশন নেওয়া সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’–কে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। ২৩ জুন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় জানানো হয়, এই গ্রুপটি এখন থেকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে বিবেচিত হবে— যা আইএস বা আল-কায়েদার মতো নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর পর্যায়ে পড়বে।

এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সদস্য হওয়া, তাদের সমর্থনে কথা বলা বা সহায়তা করা সবই শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। সর্বোচ্চ ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং মোটা অঙ্কের জরিমানার মুখে পড়তে হবে অভিযুক্তদের।

কারা এই প্যালেস্টাইন অ্যাকশন?
২০২০ সালে গঠিত প্যালেস্টাইন অ্যাকশন নিজেকে একটি প্রতিবাদী আন্দোলন হিসেবে পরিচয় দেয়। যাদের লক্ষ্য— ইসরায়েলের ‘গণহত্যা ও বর্ণবাদী’ শাসনের সঙ্গে জড়িত বহুজাতিক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিহত করা।

তাদের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে ব্রিটিশ ভূখণ্ডে অবস্থিত এমন অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যারা ইসরায়েলের জন্য সরবরাহ করে বিভিন্ন যুদ্ধ সরঞ্জাম। এর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান Elbit Systems, ইতালিয়ান Leonardo, ফরাসি Thales এবং আমেরিকান Teledyne।

সংগঠনটি তাদের ‘বাধাসৃষ্টিকারী ও সরাসরি অ্যাকশন’-এর জন্য পরিচিত। বিভিন্ন সময় তারা ব্রিটেনের বিভিন্ন কারখানায় হামলা চালিয়েছে, ভবনের ছাদে বিক্ষোভ করেছে। এমনকি গত ২০ জুন তারা অনুপ্রবেশ করে ব্রিটিশ বিমান ঘাঁটি RAF Brize Norton-এ, যেখানে দুটি সামরিক বিমানকে লাল রঙে রাঙিয়ে দেয় এবং ক্রোবার দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

কেন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে?
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার জানিয়েছেন, ‘টেরোরিজম অ্যাক্ট ২০০০’-এর আওতায় সংগঠনটিকে নিষিদ্ধের খসড়া প্রস্তাব ৩০ জুন পার্লামেন্টে উপস্থাপন করা হবে।

এই সিদ্ধান্ত এসেছে ব্রাইজ নর্টনে সামরিক বিমানে হামলার ঘটনার পর। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এ ঘটনাকে ‘অগ্রহণযোগ্য ধ্বংসাত্মক কর্ম’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। পুলিশ বলছে, এতে বহু মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতি হয়েছে।

কী বলছে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন?
সংগঠনটির মুখপাত্র মানাল সিদ্দিকি বলেন, ‘এই বিমানগুলো শুধু গাজা নয়, সিরিয়া ও ইয়েমেনেও ব্যবহৃত হয়েছে। এগুলো ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের জ্বালানি সরবরাহ ও গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানে ব্যবহৃত হয়।’

তাদের মতে, প্রকৃত অপরাধ হচ্ছে যুদ্ধবিমান দিয়ে পরিচালিত গণহত্যা, রঙ ছিটানো নয়। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ‘এই নিষেধাজ্ঞা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।’

তারা আরও উল্লেখ করে, ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী স্টারমার নিজেই একসময় এমনই এক RAF ঘাঁটিতে অনুপ্রবেশকারী প্রতিবাদীদের পক্ষে ছিলেন—তখন তিনি ছিলেন একজন মানবাধিকার আইনজীবী।

সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া
Amnesty International UK-এর প্রধান নির্বাহী সাচা দেশমুখ বলেন, ‘এটি মতপ্রকাশ, সংগঠিত হওয়া এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার হরণ করবে।’

London-based CAGE International বলেছে, ‘এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েলি যুদ্ধযন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করছে।’

আইরিশ লেখিকা স্যালি রুনি The Guardian-এ লেখেন, ‘ইসরায়েল নিরপরাধ মানুষ হত্যা করছে, আর এই সংগঠন রঙ ছিটিয়েছে—কিন্তু যুক্তরাজ্য কাকে সন্ত্রাসী বলছে, তা আমরা দেখছি।’

আগামী ৩০ জুন সংসদে খসড়া প্রস্তাব পাস হলে, প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সদস্য হওয়া বা সমর্থন করা হবে দণ্ডনীয় অপরাধ। সংগঠনটি এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা আইনজীবী নিয়োগ করেছে এবং প্রায় ৮০ হাজার পাউন্ড অনুদান সংগ্রহ করেছে।

মানাল সিদ্দিকি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা নিষিদ্ধ নই। আমাদের সংগ্রাম চলবে। যুক্তরাজ্যের নাগরিক স্বাধীনতার পক্ষে যারা, তাদের এখনই কথা বলা জরুরি।’