ইরানে হামলার পরিকল্পনা কয়েক বছরের, তিন ধাপে কার্যকর করল মোসাদ
ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা ছিল বহু বছরের পরিকল্পনার ফল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই হামলায় মোসাদের গোয়েন্দা তৎপরতা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
শুক্রবার (১৩ জুন) ভোররাতে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা ও আলোচনার টেবিলে ব্যস্ত রেখে চুপিসারে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ইরানের শীর্ষ সামরিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা নিহত হন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, বিপ্লবী গার্ডের প্রধান হোসেইন সালামি এবং অন্তত ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানী।
বিশ্বের অন্যতম রহস্যময়, দক্ষ এবং ভয়ঙ্কর গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে পরিচিত ইসরায়েলের ‘মোসাদ’। ১৯৪৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় এই সংস্থাটি। তখন থেকেই এটি ইসরায়েলের বৈদেশিক গোয়েন্দা, সন্ত্রাসবিরোধী ও গোপন সামরিক অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। সংস্থার সদর দফতর ইসরায়েলের তেল আবিবে অবস্থিত।
মোসাদের সঠিক পরিকল্পনা অনুসারেই ইরানে চালানো হয় হামলা। এতে ব্যবহৃত অস্ত্রের বেশিরভাগই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। ইরান থেকে কোনো প্রত্যাঘাত না আসায় এবং লক্ষ্যভেদে নিখুঁত সাফল্যের জন্য ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে তিন ধাপের অপারেশন পরিচালনা করেছে মোসাদ।
নিরাপত্তা কর্মকর্তাদেরকে উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, এই অভিযানের পরিকল্পনা কয়েক বছর ধরে চলে। এর জন্য ব্যাপক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং ইরানের ভেতরে গোপন অত্যাধুনিক অস্ত্র মোতায়েন করা হয়। অভিযানের মূলে ছিল মোসাদ। তারাই ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের অবস্থান চিহ্নিত করার কাজটি করে। এর পাশাপাশি, ইরানের কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য একটি গোপন অভিযান চালানো হয়।
প্রথম ধাপ
মোসাদের কমান্ডো ইউনিট ইরানের মাটিতেই আগেভাগে উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন গাইডেড অস্ত্র স্থাপন করে। এগুলো ছিল সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেমের কাছাকাছি খোলা জায়গায়। বিমান হামলার সময় দূর নিয়ন্ত্রিতভাবে সেগুলো একযোগে সক্রিয় করা হয় এবং লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত হানে।
দ্বিতীয় ধাপ
ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভিতর থেকে নিষ্ক্রিয় করা হয়। মোসাদের এজেন্টরা ইরানের ভেতরে বিশেষ যানবাহনের মাধ্যমে এই ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অকার্যকর করে। ফলে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো বিনা বাধায় আকাশসীমায় প্রবেশ করে বোমাবর্ষণ করতে পারে।
তৃতীয় ধাপ
তেহরানের নিকটে মোসাদ একটি ড্রোন ঘাঁটি স্থাপন করে। সেখান থেকে বিস্ফোরকবাহী ড্রোন উড়িয়ে ইসরায়েলের দিকে তাক করা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চারগুলো সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর করে দেওয়া হয়।
গভীর পরিকল্পনা ও সমন্বয়
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের অভিযান সফল করতে বহু বছরের পরিকল্পনা, চমৎকার গোয়েন্দা তথ্য ও অভ্যন্তরীণ সহযোগিতা জরুরি। মোসাদ শুধু শত্রুপক্ষের অস্ত্রভাণ্ডারই নয়, তাদের মানসিক প্রস্তুতিও ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছে। হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলোর বেশিরভাগই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি, যা ইসরায়েলের কাছে আগে থেকেই সংরক্ষিত ছিল। তবে অভিযানটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল এর গোয়েন্দা প্রস্তুতি—যার পেছনে ছিল মোসাদের বহু বছরের নজরদারি ও ভেতর থেকে সংগৃহীত তথ্য।