ইসরায়েলি দুই মন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাজ্যসহ ৫ দেশ
অতি ডানপন্থী ইসরায়েলি দুই মন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাজ্যসহ পাঁচটি দেশ। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ‘ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বারবার সহিংসতার উসকানি’ দেওয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ইসরায়েলি মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোট্রিচ- এই দুজনকেই যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। সেই সঙ্গে দেশটিতে থাকা তাদের সব সম্পদও জব্দ করা হবে।
অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে যৌথভাবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয়।
এ পদক্ষেপের জবাবে ইসরায়েল বলেছে, নির্বাচিত প্রতিনিধি ও সরকারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত নিন্দনীয়।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী স্মোট্রিচ ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেন-গভির ‘চরম সহিংসতা ও ফিলিস্থিনিদের মানবাধিকারের গুরুতর অপব্যবহারের সুযোগকে উসকে দিয়েছেন।
এদিকে যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘এ নিষেধাজ্ঞা, যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার মাধ্যমে সব জিম্মিকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং যুদ্ধ শেষ করার জন্য মার্কিন প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে না।’
তিনি দেশগুলোকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘ইসরায়েলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে’।
এ সিদ্ধান্তকে ‘আশ্চর্যজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবিও।
আরও পড়ুন: জুলাই শহীদদের বাড়িতে ফল দিয়ে ফেরার পথে বৈষম্যবিরোধী নেতাদের ওপর হামলা
অন্যদিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার বলেছেন, ‘অগ্রহণযোগ্য এই পদক্ষেপের’ বিরুদ্ধে কী জবাব দেওয়া হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা করতে সামনের সপ্তাহে বৈঠকে বসবে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা।
গাজা যুদ্ধ নিয়ে নিজেদের মন্তব্য এবং অবস্থান নিয়ে সমালোচিত হয়েছেন স্মোট্রিচ ও ইতামার বেন-গভির দুজনই। দুই মন্ত্রীই ফিলিস্তিনিদের জন্য গাজা উপত্যকায় সাহায্য প্রবেশের বিরোধিতা করেছেন এবং সেখানকার বাসিন্দাদের গাজা ভূখণ্ডের বাইরে পুনর্বাসনের আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, উগ্র ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের মাধ্যমে তীব্র সহিংসতার শিকার হচ্ছে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়, যা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভবিষ্যতকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
সেখানে বলা হয়, এ কারণেই আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া জোরদার করতে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাজ্য।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, ‘আমরা গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, হামাসের হাতে জিম্মি থাকা ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তি, সাহায্য বৃদ্ধি এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথ তৈরির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব।’
পররাষ্ট্র দপ্তর আরও জানিয়েছে, এই পাঁচটি দেশ এই বিষয়ে স্পষ্ট যে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ধারাবাহিক সহিংসতা এবং ভয় দেখানোর চেষ্টা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
ইসরায়েলে ক্ষমতাসীন জোটের উগ্র জাতীয়তাবাদী দলগুলোর নেতৃত্ব দেন এই মন্ত্রীরা, যাদের সংসদে আটটি আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।
আরও পড়ুন: অনুমতি-জটিলতায় খেলার মাঠেই বৃত্তি পরীক্ষা, নেপথ্যে কী
ইতামার বেন-গভিরের ইহুদি শক্তি দল, যার ছয়টি আসন ও স্মোট্রিচের জায়োনিজম দলের সাতটি আসন। যাদের সমর্থন এই সরকারের টিকে থাকার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপ নিয়ে মন্তব্য করেছে স্মোট্রিচ। পশ্চিম তীরে একটি নতুন বসতি স্থাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি জানান, যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপে ‘অপমান’ বোধ করছেন।
গত মাসেও একটি যৌথ বিবৃতি জারি করেছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স ও কানাডার নেতারা। যেখানে বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের ঝুঁকিতে রয়েছে ইসরায়েল। এমনকি দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনাও বন্ধ করছিল যুক্তরাজ্য।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের ২০ মাস পেরিয়েছে। যেখানে প্রায় এক হাজার দুইশ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।
গাজায় হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তখন থেকে গাজায় ইসরায়েলি পাল্টা হামলায় কমপক্ষে ৫৪ হাজার ৯২৭ জন নিহত হয়েছেন।