২১ মে ২০২৫, ১৯:২০

গাজায় ক্ষুধায় কাঁদছে শিশুরা, আগ্রাসন অব্যাহত ইসরায়েলের

গাজার এক শিশু  © সংগৃহীত

গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাতের মধ্যে শিশুদের মানবিক সংকট দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। খাদ্য, পানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে শিশুরা ক্ষুধা ও অসুস্থতায় কাতরাচ্ছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই সংকট মোকাবিলায় জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানালেও ইসরায়েলি সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

খান ইউনুসের এক বাবা জানান, আমি ভালো নেই, আমার সন্তানরাও নয়।

ইউনিসেফ-এর মতে, গাজায় প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজারের বেশি শিশু তীব্র খাদ্য সংকটে দিন কাটাচ্ছে। অনেকেই এমনকি একবেলা খাবারও পাচ্ছে না। নতুন করে জন্ম নেওয়া শিশুরাও বিপদে পড়েছে—বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসেবা না থাকায় মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

দক্ষিণ গাজার এক নার্স বিবিসিকে বলেন, আমরা তপ্ত রোদে তাঁবুর নিচে থাকি, পেটে কিছু নেই। আমার সন্তানরা ক্ষুধায় কাঁদছে। একজন মা হিসেবে আমি অসহায়—না পারছি ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষা করতে, না ক্ষুধা থেকে, না গরম কিংবা পোকামাকড় থেকে।

জাতিসংঘ, রেড ক্রস, ডব্লিউএইচওসহ বিভিন্ন সংস্থা গাজায় জরুরি মানবিক সহায়তা পাঠানোর চেষ্টা করলেও ইসরায়েলি অবরোধের কারণে তা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকটি ত্রাণ বহর সীমান্তে আটকে আছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পরিস্থিতিকে ‘মানবিক লজ্জা’ বলে অভিহিত করেছেন এবং অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: করিডোর নিয়ে কারও সাথে আলোচনা হয়নি, হবেও না: নিরাপত্তা উপদেষ্টা

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) পূর্ব জেরুজালেম প্রতিনিধি আন্তোয়ান রেনার্ড বলেন, ইসরায়েল কিছু সীমান্ত অস্থায়ীভাবে খুলে দিলেও তা ‘গাজায় তীব্র খাদ্য সংকটের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল’।

বিবিসির এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে সামান্য কয়েকটি ট্রাক গাজায় ঢুকতে পেরেছে। জাতিসংঘের মাধ্যমে বিদ্যমান খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাই অব্যাহত রাখা দরকার; তা ভেঙে দিলে পুরো গাজার জনগোষ্ঠী অনাহারের মুখে পড়বে এবং আমরা তা ঠেকাতে পারবো না।

গাজা প্রশাসনের মতে, চলমান সংঘাতের মধ্যে ২ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের ‘ক্ষুধানীতির’ ফলে অন্তত ৩২৬ জন ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে। অপরদিকে, জাতিসংঘ সতর্ক করেছে—যদি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খাদ্য সহায়তা না পৌঁছে, তাহলে আরও অন্তত ১৪ হাজার শিশু মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে এবং তাদের মৃত্যু হতে পারে।

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন শহরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, কায়রো, ঢাকা ও ইস্তানবুলে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে গাজার জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনও কূটনৈতিক বিবৃতির বাইরে দৃশ্যমান চাপ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে।