১৮ মে ২০২৫, ১৩:৪৬

পশ্চিমবঙ্গে ভারতের সামরিক মহড়া, নেপথ্যে যা জানা গেল

ভারতীয় সেনাবাহিনীর মহড়া  © সংগৃহীত

ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে হত্যাকাণ্ডের পর শুরু হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় এ অপারেশন বন্ধ হওয়ার পর এবার ভারতের পূর্ব সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ–বাংলাদেশ সীমান্তেও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৪ মে থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে ‘তিস্তা প্রহর’ নামে একটি যৌথ সামরিক মহড়া সম্পন্ন হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম—দুই রাজ্যেরই সীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে।

তিন দিনব্যাপী এই মহড়াটি অনুষ্ঠিত হয় তিস্তা ফায়ারিং রেঞ্জে, যা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডরের কাছে অবস্থিত। এই করিডরটি ‘চিকেন’স নেক’ নামে পরিচিত। এটি ভারতের সবচেয়ে সরু অংশ—যার উত্তরে নেপাল, দক্ষিণে বাংলাদেশ এবং মাত্র ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে চীন ও ভুটানের সীমান্ত।

গত শুক্রবার ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘নদীমাতৃক জটিল এলাকায় চালানো এই বৃহৎ পরিসরের সামরিক মহড়ায় বাস্তব যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন শাখার লড়াইয়ের সক্ষমতা ও পারস্পরিক সমন্বয় পরীক্ষা করা হয়েছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই মহড়ায় পদাতিক, গোলন্দাজ, সাঁজোয়া ইউনিট, মেকানাইজড পদাতিক বাহিনী, স্পেশাল ফোর্স, সেনা বিমান, প্রকৌশলী ও সিগন্যাল কোর অংশ নিয়েছে। এতে নতুন প্রজন্মের অস্ত্র ব্যবস্থাও ব্যবহার করা হয়েছে।

ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) একজন কর্মকর্তা দাবি করে বলেন, ‘গত বছর জুলাইয়ে বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর থেকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগ বেড়েছে। এরপর ১০ মে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে। এতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, পাশাপাশি ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠীর উত্থানও উদ্বেগের বিষয়।’

তিনি আরও দাবি করেন, ‘বাংলাদেশ সরাসরি ভারতের জন্য সামরিক হুমকি না হলেও পাকিস্তানের আইএসআই সেখানে তাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ভারতের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক তৎপরতা বাড়াতে পারে।’

পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যটির পুলিশ কর্মকর্তারা।

শুক্রবার মুর্শিদাবাদের ফারাক্কা ব্যারেজে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ), সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ) ও রাজ্য পুলিশের যৌথ মক ড্রিল অনুষ্ঠিত হয়। ২ হাজার ২৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ব্যারেজে গঙ্গার পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য মোট ১০৯টি গেট রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজ্য পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যারেজটি শুধু বাংলাদেশে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে না, ভারতের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গকে সংযুক্ত করা রেললাইনও বহন করে। ব্যারেজের কোনো ধরনের ক্ষতি হলে রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।’

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় সুন্দরবনের নদীমাতৃক বদ্বীপ ও বঙ্গোপসাগরে নৌচলাচলের ওপর ভারতীয় কোস্টগার্ড ও পুলিশের নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

একজন জেলা পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সুন্দরবন সীমান্ত এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও নিরাপত্তার দিক থেকে দুর্বল। সন্ধ্যার পর জেলেদের নৌকা চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া রাতের বেলা যেকোনো নৌকা থামিয়ে কড়া তল্লাশি করা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু ঘটে। এর প্রায় দুই সপ্তাহ পর, ৭ মে গভীর রাতে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পাল্টা অভিযান চালায়। এরপর থেকেই ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।