বৃষ্টিবিহীন শহরে বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাবে কুয়াশা

বিশ্বের বৃষ্টিবিহীন শহরগুলোর জন্য বিশুদ্ধ পানির সংকট একটি বড় সমস্যা। তবে চিলির একদল গবেষক জানিয়েছেন, কুয়াশা থেকে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করা সম্ভব হলে এমন শুষ্ক শহরগুলোর জন্য তা হতে পারে আশীর্বাদ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
গবেষকরা দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় মরু শহর আল্টো হসপিসিওতে এ পদ্ধতির সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করেছেন। অঞ্চলটিতে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত মাত্র ৫ মিলিমিটার। তারা বর্তমানে পুরো দেশের কুয়াশাপ্রবণ এলাকার একটি মানচিত্র তৈরি করছেন, যা পানির সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে।
এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউনিভার্সিদাদ মায়রের ড. ভার্জিনিয়া কার্টার গ্যাম্বেরিনি। তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে এখানের অনেকের বাড়িতে বিশুদ্ধ পানির সংযোগ নেই। অনেক শহরের মতো এখানের বাসিন্দাদের সামাজিক সমস্যাও প্রকট।
আরো পড়ুন: চাষ ছাড়াই আলু উৎপাদনের নতুন কৌশল উদ্ভাবন
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অনেকে বিশুদ্ধ পানি পেতে ভ্রাম্যমাণ সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরশীল। তবে গবেষকদের মতে, শহরটির পাহাড়ি এলাকায় ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হলেও সে সম্ভাবনা এখনো কাজে লাগানো হয়নি।
কুয়াশা কীভাবে বিশুদ্ধ পানি হবে?
গবেষকরা জানাচ্ছেন, সূক্ষ্ম একটি জাল খুঁটিতে টানিয়ে দেওয়া হয়। যখন কুয়াশার মেঘ এর মধ্যে দিয়ে যাবে, তখন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানির কণা জালে জমা হবে। পরে তা সংরক্ষণ করে ট্যাংকে জমান হবে।
এই পদ্ধতি লাতিন আমেরিকার গ্রামীণ এলাকাগুলোতে কয়েক দশক ধরে সীমিত পরিসরে ব্যবহার হয়ে আসছে। বর্তমানে সাহারা মরুর শেষপ্রান্তে মরক্কোতে অন্যতম বৃহৎ কুয়াশা থেকে পানি সংগ্রহের প্রকল্প চালু রয়েছে।
তবে ড. কার্টার বলছেন, বড় পরিসরের কুয়াশা থেকে পানি সংগ্রহ ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব। যা নগরবাসীর জন্য টেকসই ও নিরবচ্ছিন্ন পানির উৎস হতে পারে।
গবেষকরা স্যাটেলাইট চিত্র ও আবহাওয়া পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর তৈরি হওয়া কুয়াশার মেঘ শহরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যার মাধ্যমে স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পানি সংকট দূর করা সম্ভব।
গবেষকরা হিসাব করে দেখিয়েছেন, প্রতিদিন এক বর্গমিটার জাল থেকে গড়ে ২.৫ লিটার পানি সংগ্রহ করা সম্ভব। ১৭ হাজার বর্গমিটার জাল স্থাপন করা হলে সপ্তাহে ৩ লাখ লিটার পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। বর্তমানে যা অন্য কোথাও থেকে এনে ট্রাকে করে সরবরাহ করা হয়।
এদিকে, পৃথিবীর অন্যতম শুষ্কতম অঞ্চল আতাকামা মরুর কিনারায় অবস্থিত আল্টো হসপিসিও। এখানে বৃষ্টিপাত প্রায় হয়ই না। ফলে শহরগুলোর প্রধান পানির উৎস ভূগর্ভস্থ জলাধার। কিন্তু নগরায়ন ও শিল্পোৎপাদনের কারণে এ জলাধারগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে। ফলে বিকল্প ও টেকসই পানির উৎস খোঁজা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন গবেষকরা।
ড. কার্টার বলেন, ‘চিলি সমুদ্র থেকে কুয়াশা পাওয়ার জন্য উপযোগী দেশ। কারণ পুরো দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত। পাহাড়ি ভূপ্রকৃতির কারণে এখানে কুয়াশার প্রবাহ বেশি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেঘ থেকে পানি সংগ্রহের এই পদ্ধতি শহরগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা বাড়াবে এবং বিশুদ্ধ পানির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
সূত্র: বিবিসি