বাংলাদেশি অভিবাসীদের ৬২ শতাংশের গন্তব্য যে দেশ
২০২৪ সালেও বাংলাদেশি অভিবাসীদের শীর্ষ গন্তব্য ছিল সৌদি আরব। মোট অভিবাসনের ৬২.১৭ শতাংশ (প্রায় ৬,২৭,০০০ কর্মী) সৌদি আরবে গেছেন, যেখানে অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা অব্যাহত ছিল।
বিশ্বের একমাত্র ডিজিটাল অভিবাসন প্ল্যাটফর্ম আমি প্রবাসীর বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২৪-এ এই তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন করে।
প্রতিবেদনে অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ হতে বিদেশগামী অভিবাসী কর্মীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। গত বছর মোট ১০,০৯,১৪৬ জন বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে যাত্রা করেছেন, যা ২০২৩ সালে বিদেশগামী ১৩,৯০,৮১১ জনের তুলনায় ২৭.৪ শতাংশ কম। তবে এই নিম্নগামী ধারার মাঝেও একটি ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর বিএমইটি নিবন্ধনে নারীদের অংশগ্রহণ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।
আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশি কর্মীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য মালয়েশিয়ায় অভিবাসন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৪ সালে মাত্র ৯৩,০০০ কর্মী মালয়েশিয়ায় গিয়েছেন। দেশটির নতুন শ্রমনীতি এর মূল কারণ। গত বছরের প্রথমার্ধে মালয়শিয়াতে অভিবাসন স্বাভাবিক গতিতে চললেও ২০২৪ এর মে মাসের পর থেকে দেশটিতে অভিবাসনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমতে থাকে।
তথ্য অনুয়াযী, অভিবাসন হ্রাস পাওয়ার পেছনে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নানা কারণও ভূমিকা রেখেছে। জুলাই- আগস্ট মাসে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অস্থিরতা বিদেশগামী কর্মীদের কিছুটা অনিশ্চয়তায় ফেলেছে। এছাড়া, দক্ষ কর্মী তৈরির অন্যতম মাধ্যম, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহের বিভিন্ন কোর্সেও ভর্তির সংখ্যা কমেছে। ২০২৩ সালে যেখানে দেশব্যাপী বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী সংখ্যা ছিল ২,৩৬,২৭০ সেখানে ২০২৪ সালে এই সংখ্যা নেমে এসেছে ১,১২,১৬৬-তে যার অন্যতম কারণ আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে কর্মী চাহিদা কমে আসা।
বিএমইটি নিবন্ধনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে মোট বিএমইটি নিবন্ধনে নারী অভিবাসীদের নিবন্ধনের হার ছিল ২.৭৮ শতাংশ যা ২০২৪ সালে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৭৯ শতাংশে। বিদেশ গমনে বাংলাদেশি নারীদের আগ্রহ বৃদ্ধি এর অন্যতম কারণ।
আমি প্রবাসীর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক ই. হক বলেন, "নারীদের বিএমইটি নিবন্ধনের সংখ্যা বৃদ্ধি প্রমাণ করে বাংলাদেশের নারীরা আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার গড়তে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন। এটি বৈশ্বিক শ্রমবাজারে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণে ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করে। সঠিক প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করা হলে, আমরা বিদেশে আরও দক্ষ কর্মী পাঠাতে পারবো।"
আরও জানানো হয়, ২০২৪ সালে বিএমইটি নিবন্ধনের মোট সংখ্যা ছিল ৭,৯৮,২৭৬, যা ছাপিয়ে গেছে ২০২৩ সালের ৬,৬০,০৮৮টি নিবন্ধনকে। যদিও বাংলাদেশি পুরুষরা এখনও বৈদেশিক শ্রমবাজারে আধিপত্য বজায় রেখেছেন তবে নারীদের আগ্রহ বৃদ্ধি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে নারীদের পেশা নির্বাচনে পরিবর্তনের দিকটিও। আগের মতো শুধু গৃহকর্মী পেশার জন্য নয় বরং এখন নারীরা ধীরে ধীরে প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট পেশার দিকেও ঝুঁকছেন। কম্পিউটার অপারেশন, গ্রাফিক ডিজাইন ও অটোক্যাড ড্রাফটিং-এর মতো প্রশিক্ষণ কোর্সে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। গত বছর সাতশরও বেশি নারী 'দক্ষ কর্মী' হিসেবে বিদেশে গেছেন যা উচ্চ বেতনের চাকরির জন্য নারীদের যোগ্য হয়ে ওঠার হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সব মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে ২০২৪ সালে অভিবাসন সংখ্যা হ্রাস পেলেও বিএমইটি নিবন্ধন বৃদ্ধি ও নারীদের বাড়তি অংশগ্রহণ বাংলাদেশের শ্রমশক্তির ইতিবাচক পরিবর্তন তুলে ধরেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্নত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, লিঙ্গ বৈষম্যহীন নিয়োগ নীতি ও আরও উন্নত বৈদেশিক শ্রম চুক্তি বাংলাদেশের এই খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে যা ভবিষ্যতে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহকে টেকসই করতে সহায়ক হবে।