১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:০৩

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিভাগ বন্ধ করতে চান ট্রাম্প?

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিভাগ বন্ধ করতে চান ট্রাম্প?
ডোনাল্ড ট্রাম্প  © সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিভাগকে বন্ধ বা বিলুপ্ত করতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ট্রাম্প ধনকুবের ইলন মাস্ককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।

মার্কিন ফেডারেল শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্ত করা উচিত মন্তব্য করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি শিক্ষা বিভাগকে বিলুপ্ত করতে চাই। শিক্ষাকে অঙ্গরাজ্যগুলোতে ফিরিয়ে দিতে চাই। যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা বিশ্বজুড়ে তাদের সমবয়সী শিক্ষার্থীদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে।’

শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্ত হলে ‘অনেক সুবিধা মিলবে’ উল্লেখ করে তিনি দাবি করে বলেন, এতে শিক্ষা খাতে খরচ অর্ধেক কমবে। এরপরও ট্রাম্প তার নির্বাচনী বক্তব্যে শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্তির প্রতিশ্রুতিও দেন।

এখন প্রশ্ন এসেছে যে আর কয়েক দিন পরই প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ট্রাম্প কি সত্যিই মার্কিন ফেডারেল শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্ত করবেন? শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্ত করা কি সম্ভব? অঙ্গরাজ্যগুলো কি শিক্ষার দায়িত্ব নিতে পারবে?

দ্য গার্ডিয়ানের যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক প্রতিবেদক ও ভুল তথ্যের ওপর কাজ করা র‍্যাচেল লেইনগাং তা খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোটারদের কাছে প্রচারের সময় বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগকে বিলুপ্ত করে অঙ্গরাজ্যগুলোকে শিক্ষা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেবেন। তবে তিনি কীভাবে এ কাজ করবেন বা প্রক্রিয়াটি কী হবে, তা তিনি ব্যাখ্যা করেননি। তবে তিনি একা কাজ করতে পারবেন না। কারণ এটি সম্পন্ন করা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। কোনো একটি সংস্থা তৈরি বা বিলুপ্ত করার অনুমোদনের জন্য কংগ্রেসের কাছে পাঠাতে হয়।

শিক্ষা বিভাগের কাজ কি
জানা গেছে, প্রায় চার হাজার কর্মচারী নিয়ে মার্কিন শিক্ষা বিভাগ গঠিত। শিক্ষা বিভাগ অঙ্গরাজ্যর স্কুলগুলোর জন্য নানা প্রোগ্রাম তৈরি করে। স্কুলগুলোতে ফেডারেল তহবিল বিতরণ করে। এ তহবিলের লক্ষ্য বেশির ভাগ নিম্ন আয়ের ছাত্র ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। প্রোগ্রামগুলোর জন্য কিছু নীতিনির্দেশনা তৈরিও শিক্ষা বিভাগের কাজ। এ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাঋণের প্রোফাইল পরিচালনা করে। এটি শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু নাগরিক অধিকার ও নীতি নিয়েও কাজ করে এ বিভাগ।

যুক্তরাষ্ট্রে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থানীয়ভাবে পরিচালিত হয়। বেশির ভাগ তহবিল অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় উৎস থেকে আসে। আর রাজ্য আইনসভার সদস্য, শিক্ষা সংস্থা এবং স্কুলের বোর্ডগুলো স্থানীয় স্কুলগুলোর জন্য শিক্ষার মান ও নীতিনির্ধারণী কাজে যুক্ত থাকে।

শিক্ষা বিভাগটি বিলুপ্ত করা রক্ষণশীলদের দীর্ঘকালের একটি আলোচনার বিষয়। এ আলোচনা পাবলিক শিক্ষাকে সংশোধন করার ইঙ্গিত এবং পাবলিক স্কুলগুলোকে বঞ্চিত করার জন্য।

দেশটির একটি রক্ষণশীল চিন্তন প্রতিষ্ঠান (থিংক ট্যাংক) আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের এডুকেশন পলিসি স্টাডিজের পরিচালক রিক হেস বলেন, ‘কিছু কিছু স্তরে, এটি সঠিক আলোচনা নয়। আপনি শিক্ষা বিভাগকে বাতিল বা বিলুপ্ত করতে পারেন এবং এতে আসলে সামান্য কিছুই পরিবর্তিত হতে পারে, কংগ্রেস বিভিন্ন কর্মসূচির জন্য তহবিল কমিয়ে দিতে পারে বা শূন্য করার জন্য ভোট দিলেও।’

তবে এটি কেবল প্রতীকী ব্যাপারে নয়, এটি করা গেলে দেশটির কে-টুয়েলভ শিক্ষায় (K-12 হলো প্রাইমারি-কিন্ডারগার্টেন-সেকেন্ডারি থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত) এবং উচ্চশিক্ষায় বড় পরিবর্তন আসবে।

পেন স্টেটের এডুকেশন পলিসি স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কেলি রোজিঞ্জার বলেছেন, এই বিলুপ্ত করার উদ্যোগ এই বার্তা দেবে যে ‘আমরা গণতান্ত্রিক সমাজে শিক্ষাকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখি না।’

এটা করা যায় কি
১৯৭৯ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার শিক্ষা বিভাগ চালু করেন। এরপর থেকেই রক্ষণশীলরা এটি বিলুপ্ত করা বা এর কোনো প্রয়োজন নেই, এমনটা বলে আসছে। জিমি কার্টারের সময় এর নাম ছিল স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কল্যাণ বিভাগ। কার্টারের উত্তরসূরি রোনাল্ড রিগানও নতুন বিভাগটির বন্ধ বা বিলুপ্তি চেয়েছিলেন। এরপর থেকে শিক্ষা বিভাগ ভেঙে ফেলা বা বিলুপ্ত করার কথা রক্ষণশীলদের অন্যতম প্রধান ভিত্তি বা আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রিক হেস বলেছেন, ‘রিপাবলিকানরা বিভাগটিকে অপ্রয়োজনীয় ও আমলাতন্ত্রের জন্য অপ্রয়োজনীয় মনে করে। তারা (রিপাবলিকানরা) মনে করে, এটা সংবিধানের চরম লঙ্ঘন।’

কেলি রোজিঞ্জার বলেন, শিক্ষা বিভাগ যে ফেডারেল সরকারের আওতাভুক্ত, সংবিধানে ব্যাপারটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু ছাত্রদের ‘চমৎকার শিক্ষার সুযোগ পাওয়া’ নিশ্চিত করতে ভূমিকা রয়েছে ফেডারেল সরকারের। নাগরিক অধিকার শেখানোর ও রক্ষায় সুস্পষ্ট ভূমিকা রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।

মার্কিন সিনেটে আইন পাস করার জন্য কার্যকরভাবে ৬০ জন সিনেটরকে ভোট দিতে হয়। সিনেটরদের আবার সুযোগ আছে একটি বিল অনির্দিষ্টকালের জন্য বিলম্বিত করার। রিপাবলিকানদের ৫৩ জন সিনেটর থাকছেন।

আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের এডুকেশন পলিসি স্টাডিজের পরিচালক রিক হেস বলেন, শিক্ষা বিভাগের কিছু প্রোগ্রাম, যেমন স্কুলগুলোতে নিম্ন আয়ের জন্য অর্থায়ন এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য অর্থায়ন উভয় পক্ষের (রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক) কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়।

তিনি বলেন, ‘কেউ শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্ত করবে বা কেউ বিভাগটি বাতিল করবে না। এটি একটি প্রতীকী বিতর্ক এবং এটি গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে মানুষ কী ভাবছে। এটি ফেডারেল সরকারের ভূমিকাকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করবে না। ফলে স্কুলের প্রোগ্রামগুলো বন্ধ হয়ে যাবে নাকি নিয়মগুলো পরিবর্তিত হয়ে নতুন করে লেখা হবে, তা অজানা।’

পেন স্টেটের এডুকেশন পলিসি স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কেলি রোজিঞ্জার বলেন, ‘শিক্ষা বিভাগটি বাতিল করে দিয়ে এর প্রোগ্রামগুলো (অর্থায়ন, সহশিক্ষা কার্যক্রম) অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হলে এসব প্রোগ্রাম সম্পর্কে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের ক্ষতি হবে বা সীমিত হয়ে পড়বে। এটি আমাদের পেশাদার আমলাতন্ত্রের জায়গা থেকে দূরে সরিয়ে নেবে। কারণ, শিক্ষার জন্য কাজ করা বিশেষজ্ঞদের দল শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত নীতিগুলো নিয়ে কাজ করে ও বাস্তবায়ন করে।’

রিক হেস বলেন, ‘রিপাবলিকানরা ফেডারেল-সংশ্লিষ্টতা কমাতে চায় এবং তারা অনেক কম আমলা রাখতে চায়। যে প্রোগ্রামগুলো সরাসরি ছাত্রছাত্রীদের অর্থায়ন করে না, যেমন শিক্ষক প্রশিক্ষণ, সেগুলো বন্ধ হতে পারে। এর ফলে উচ্চতর শিক্ষা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রভাবিত হবে। এর ফলে শিক্ষাঋণ (স্টুডেন্ট লোন) পরিশোধ এবং মওকুফে বাইডেনের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীন বাতিল করা হতে পারে। এটা বাতিল হলে সন্তানদের শিক্ষার ওপর অভিভাবকদের নজরদারি বাড়াতে হবে।’

অধ্যাপক কেলি রোজিঞ্জার বলেছেন, ‘এর ফলে পাবলিক স্কুল ও কলেজগুলোর ওপর জনসাধারণ আস্থা হারাবে।’