ট্রাম্পের এআই উপদেষ্টা হলেন শ্রীরাম কৃষ্ণান, কে এই ভারতীয় বংশোদ্ভুত?

শ্রীরাম কৃষ্ণান
শ্রীরাম কৃষ্ণান  © সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট (নির্বাচিত) ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে নিয়োগ পেলেন আরও এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান। জানা গেছে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত উদ্যোক্তা শ্রীরাম কৃষ্ণানকে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) উপদেষ্টা’ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে হোয়াইট হাউজের নীতি নির্ধারণে জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করবেন শ্রীরাম কৃষ্ণান।

সাধারণ করপোরেট কর্মী হয়ে কীভাবে রাজনৈতিক যোগসূত্র তৈরি করলেন শ্রীরাম, এমন প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। জানা গেছে, টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের সঙ্গে বেশ ভালো বন্ধুত্ব এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইঞ্জিনিয়ারের। সামাজিক মাধ্যম টুইটারকে এক্সে রূপ দেয়ার সময় মাস্কের সঙ্গে কাজ করেছিলেন তিনি। অনেকেই বলছেন, মাস্কের পরামর্শেই শ্রীরাম যোগ দিয়েছেন ট্রাম্প প্রশাসনে। তবে তারা এটাও বলছেন, যোগ্য ব্যক্তিকেই বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প।

শ্রীরাম কৃষ্ণান সম্পর্কে যা জানা গেল 
ভারতীয় বংশোদ্ভূত সফটওয়্যার প্রকৌশলী শ্রীরাম কৃষ্ণান। তিনি টুইটারের সাবেক নির্বাহী। কৃষ্ণান টুইটার ছাড়াও মাইক্রোসফট, ইয়াহু, স্ন্যাপ ও ফেসবুকে কাজ করেছেন। এ ছাড়াও কাজ করেছেন প্রযুক্তি জায়ান্ট নানা প্রতিষ্ঠানে। ইলন মাস্কের সঙ্গে কাজের সুবাদে সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়ে শ্রীরামের সুনাম।

২০২১ সালের এক সাক্ষাৎকারে কৃষ্ণান বলেছিলেন, তিনি ও তার স্ত্রী আরতি রামমূর্তির সঙ্গে মাস্কের প্রথম জানাশোনার সুযোগ হয়েছিল কয়েক বছর আগে। তখন টুইটার–সম্পর্কিত কিছু বিষয়ে মাস্ককে সাহায্য করেছিলেন কৃষ্ণান। এ ঘটনার মধ্য দিয়েই তাদের সঙ্গে মাস্কের একটি সম্পর্ক তৈরি হয়।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশ কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্সের সদর দপ্তরে ব্যক্তিগত সফরে গিয়েছিলেন কৃষ্ণান ও আরতি। এ সময় তারা মাস্কের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করেন।

তিনজনের মধ্যে যোগাযোগের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তখন ‘ক্লাবহাউস’ নামের সোশ্যাল অডিও অ্যাপে এই দম্পতির উপস্থাপনায় এক টক শোতে উপস্থিত হয়েছিলেন মাস্ক। টক শোটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।

চেন্নাইয়ের দিনগুলো
কৃষ্ণানের জন্ম ভারতের চেন্নাইয়ে। তার ভাষ্যমতে, তিনি খুবই সাধারণ মধ্যবিত্ত একটা পরিবারে জন্ম নেন, বেড়ে ওঠেন। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে কৃষ্ণানের পরিবারের কাছে কম্পিউটার ছিল একটি বিলাসিতা। তা সত্ত্বেও তিনি বলেকয়ে তার বাবাকে একটি কম্পিউটার কেনার ব্যাপারে রাজি করান। এই কম্পিউটারই তার জীবন বদলে দেয়।

২০২১ সালে এক সাক্ষাৎকারে কৃষ্ণান বলেছিলেন, কম্পিউটারটি কিনতে তখন ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার রুপি খরচ হয়েছিল। কৃষ্ণান তার বাবাকে বলেছিলেন, তিনি তার পড়াশোনার কাজে কম্পিউটারটি ব্যবহার করবেন।

কৃষ্ণান চেন্নাইয়ের আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেছেন। একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই বিষয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন আরতি। ২০০২ সালে তাদের পরিচয় হয়। পরে সম্পর্ক, বিয়ে। দুজনেরই স্বপ্ন ছিল সিলিকন ভ্যালিতে যাওয়ার।

একপর্যায়ে মাইক্রোসফটের ওপর কৃষ্ণানের একটি ব্লগপোস্ট কোম্পানিটির এক নির্বাহীর নজরে পড়ে। এই সূত্রে ২০০৫ সালে এই দম্পতি মাইক্রোসফটে নিয়োগ পান। ২০০৭ সালে কৃষ্ণান যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। পরে যান আরতি। মাইক্রোসফটের পর তারা অন্য বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তারা ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান। তারপর ধীরে ধীরে শ্রীরাম নিজেকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়।


সর্বশেষ সংবাদ