হিজাব সংক্রান্ত বিতর্কিত আইন স্থগিত করল ইরান
ইরানের হিজাববিষয়ক বিতর্কিত একটি আইন স্থগিত করেছে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল। এ আইন শুক্রবার থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান আইনটিকে ‘অস্পষ্ট ও সংস্কারের প্রয়োজন’ বলে উল্লেখ করেছেন। এর মাধ্যমে আইনটি পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
প্রস্তাবিত নতুন আইনে নারী ও মেয়েদের চুল, হাতের বাহু ও পায়ের নিচের অংশ প্রদর্শনের জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। দেশটির অধিকার কর্মীরা এর তীব্র সমালোচনা করছিলেন। নারীদের জন্য কঠোর পোশাক আইন কয়েক দশক ধরে ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
একে কেন্দ্র করে অতীতে অনেক বিক্ষোভের জন্ম হয়েছিল। এই আইনে অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে এবং কেউ যদি নিয়ম কানুনকে উপহাস করে তাহলে তাকে বড় জরিমানা ও ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছিল। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ আইন নিয়ে তাদের শঙ্কার কথা বলে আসছিল।
আরও পড়ুন: জর্জিয়ার রিসোর্টে মিলল ১১ ভারতীয়র মরদেহ
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ইরানের কর্তৃপক্ষ ‘দমন-পীড়নের দম বন্ধ করা প্রক্রিয়াকে আরও সুরক্ষিত করতে চাইছে’।
জুলাইয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তখনকার প্রার্থী পেজেশকিয়ান প্রকাশ্যেই হিজাব ইস্যুতে ইরানের নারীদের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করা হয়, তার সমালোচনা করেছিলেন। তিনি কারও ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ না করার অঙ্গীকার করেছিলেন। বহু ইরানি নাগরিকের প্রত্যাশাও তাই। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, যারা সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে হতাশ।
মাসৌমে এবতেকার নারী ও পরিবারবিষয়ক সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনিও আইনটির সমালোচনা করেছেন। তার মতে, ‘নতুন আইন হলো ইরানের জনসংখ্যার অর্ধেকের জন্য একটি অভিযোগপত্র।’
হিজাব বিতর্ক গত সপ্তাহে দেশটিতে ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে দেশটির জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী পারাসতো আহমাদির গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে। তিনি হিজাব পরিধান না করেই ইউটিউবে ভার্চুয়াল কনসার্ট লাইভ করছিলেন।
আরও পড়ুন: মস্কোতে বোমা বিস্ফোরণে পারমাণবিক সুরক্ষা বাহিনীর প্রধান নিহত
ওই কনসার্ট খুব দ্রুত ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। তবে আহমাদি ও তার ব্যান্ডের সহকর্মীদের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। মানুষের তীব্র প্রতিবাদের মুখে এক দিন পরই তাদের মুক্তি দেয়।
২০২২ সালে পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই দেশটিতে হিজাব ইস্যুতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পোশাক বিধি না অভিযোগ করে তখন তাকে গ্রেপ্তা র করা হয়েছিল। পুলিশের কাছে আটক এবং নির্যাতনের পর তিনি কোমায় চলে যান, যার জের ধরে ইরানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল তখন। পুলিশ অবশ্য বলেছিল যে তার ওপর নির্যাতন হয়নি, তিনি হার্ট অ্যাটাক করেছেন।
গত দুই বছর ধরে অনেক ইরানি তরুণ নারী প্রকাশ্যেই হিজাব পরিধান করে সরকারের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। গত সপ্তাহেও ৩০০ ইরানি অধিকারকর্মী, লেখক এবং সাংবাদিক প্রকাশ্যে নতুন হিজাব আইনের প্রতিবাদ করেছেন। তারা এটিকে ‘অবৈধ ও অপ্রয়োগযোগ্য’ আখ্যায়িত করে প্রেসিডেন্টের প্রতি তার নির্বাচনী অঙ্গীকারকে সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল হুথি
দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ কট্টরপন্থী অংশের চাপ সত্ত্বেও, ইরানের অনেক তরুণ সরকারের বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে ভীতিহীনভাবে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে।
পেজেশকিয়ানের সমর্থকরা বিশ্বাস করেন যে নতুন হিজাব আইন তরুণ নারীদের আইন ভঙ্গ করা ঠেকাতে পারবে না এবং এটি এমনকি পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে।
তবে আইনটির সমর্থকরা প্রেসিডেন্টকে এটি বাস্তবায়নে এগিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। তারা দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকার জন্য নিরাপত্তা কাউন্সিলের সমালোচনা করছে এবং দ্রুত এটি যাতে প্রয়োগ করা যায় সেজন্য স্বাক্ষর করার দাবি জানিয়েছে। এরপরও এটি কার্যকর করা স্থগিত করার মানে হলো সরকার দু বছর আগের মতো আরেকটি বিক্ষোভের সূচনা হতে পারে বলে সরকারের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে।
খবর বিবিসি বাংলার