অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ ধনকুবের বাংলাদেশি তরুণ, কর্মীদের বোনাস দিলেন ২২ মিলিয়ন ডলার
অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের বাংলাদেশি তরুণ। তার নাম রবিন খুদা। অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তি খাতের অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তিত্ব এই বাংলাদেশি। তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডেটা সেন্টার গোষ্ঠী ‘এয়ারট্রাঙ্ক’–এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী পরিচালক (সিইও)। সম্প্রতি তিনি তার ৩৩০জন কর্মীকে ২২ মিলিয়ন ডলার বোনাস দিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যম ইয়াহু নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার ডাটা সেন্টার এয়ারট্রাঙ্ক কর্মীদের ২২ মিলিয়ন ডলার বোনাস দিয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৬ হাজার ২৯৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কোম্পানি তাদের প্রত্যেক কর্মীকে ৬৫ হাজার ডলার করে বোনাস দিয়েছে। ২৪ বিলিয়ন ডলারে কোম্পানি বিক্রির পর প্রতিষ্ঠানটির সিইও এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই লাখ ৮৬ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা।
রবিন খুদা জানান, কোম্পানির ৩৩০ কর্মীকে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি তাদের লভ্যাংশ ১২০ সিনিয়র স্টাফের সঙ্গে শেয়ার করেছে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) কর্মীদের এমন সুখবর দিয়েছেন রবিন খুদা। তিনি জানান, কর্মীদের ছাড়া এ সাফল্য অর্জন করা সম্ভবপর ছিল না। ফলে তিনি তাদের পুরস্কৃত করতে চান।
‘এয়ারট্রাঙ্ক’ বিশাল ডাটা সেন্টার প্রতিষ্ঠান। তাদের ডাটা সেন্টারে মাইক্রোসফট, গুগল এবং অ্যামাজনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের ডিজিটাল তথ্য জমা ও পরিচালনা করে আসছে। কোম্পানির সিডনি, মেলবোর্ন, হংকং, টোকিও, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে ১১টি ডাটা সেন্টার রয়েছে। সম্প্রতি ‘এয়ারট্রাঙ্ক’ কিনে নেয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ব্ল্যাকস্টোন ইনকরপোরেশন। সেটি ২৪ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বেশি দামে কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণের ঘটনা। কোম্পানি বিক্রির অর্থ থেকেই কর্মীদের বোনাস দেন এই বাংলাদেশি।
২০১৫ সালে তথ্য ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠান এয়ারট্রাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেন রবিন খুদা। পরের বছর ২০১৬ সাল থেকে এটি কার্যক্রম শুরু করে। পরের বছরেই এটি প্রথম বড় কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি করে রবিন খুদার প্রতিষ্ঠান। এরপর থেকেই অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তিপাড়ায় সুনাম কুড়াতে শুরু করেন এয়ারট্রাঙ্ক ও রবিন খুদা। বর্তমানে সেখানের অন্যতম প্রযুক্তি জায়ান্ট এই বাংলাদেশি।
রবিন খুদা ১৮ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসেন। গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে। তিনি অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে বাণিজ্য ও হিসাববিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি এই কোম্পানি দাঁড় করাতে গিয়ে নিজের সব সঞ্চয় শেষ করে ফেলেন। এমনকি তিনি প্রায় দেউলিয়া হতে চলেছিলেন। তিনি বলেন, আমরা এমন জায়গায় ছিলাম যে, আমাদের সব টাকা ফুরিয়ে গিয়েছে। এমনকি আমি বরখাস্ত তহবিল থেকে অর্থ নিয়েছিলাম, যা সত্যি অনেক দুরূহ ছিল।
রবিন বলেন, আমি এটির জন্য মরিয়া ছিলাম। আমি সত্যিকারের কিছুতে করতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছি। তবে আমি খুব বেশি সাপোর্ট পাইনি। এমনকি আমি নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করার জন্য আইনজীবীর শরণাপন্ন হয়েছিলাম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্রির পরও কোম্পানির সিইও হিসেবে থাকছেন রবিন। তিনি এটিকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হিসেবে গড়ে তুলতে চান।