দু’হাত এবং দু’পা অচল, মুখ দিয়েই কম্পিউটার চালান তুহিন
লক্ষ্য, আইআইটি খড়গপুর থেকে এমটেক এবং পিএইচডি করবেন। ৩ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। সেই উপলক্ষে তুহিনের হাতে ভারতের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে তুলে দেওয়া হয়েছে ‘অ্যাকাডেমিক এক্সেলেন্সি অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ ওয়ার্কস্’ সম্মান। খবর আনন্দবাজার অনলাইনের।
বসতে হলে হুইলচেয়ারই ভরসা তুহিনের। হাত এবং পা না-চললেও দারুণ ‘মুখ চালান’ তিনি। মুখে কলম এবং পেন্সিল ধরে পরীক্ষা দিয়েছেন। পড়াশোনায় অসাধারণ এই যুবক কম্পিউটার সায়েন্সে বিটেক করেছেন। কম্পিউটার চালাতেও তাঁর অস্ত্র মুখ। মুখে কলম দিয়ে কিবোর্ডে টাইপ করেন। আরও পড়াশোনা করবেন বলে সদ্য বিদেশি কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
খড়গপুর শহরের মালঞ্চ এলাকার বাসিন্দা তুহিনের দু’হাত এবং দু’পা অচল। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনও তাঁর লক্ষ্যপূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। হুইলচেয়ার সঙ্গী হলেও এর জন্য আলাদা কোনও সুযোগ নিতে চান না ওই যুবক। খড়গপুর আইআইটি ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন তুহিন। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন রাজস্থানের কোটা থেকে। তার পর শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে বিটেক করেছেন।
পরীক্ষার সময় তুহিন কখনও কারও সাহায্য নেননি। মুখে কলম এবং পেন্সিল নিয়ে লেখালেখি করতে কোনও সমস্যা হয় না তাঁর। তুহিনের কথায়, ‘আমি মুখ দিয়েই পেন বা পেন্সিল দিয়ে লিখি। কোনও সমস্যা হয় না। আর পরীক্ষার সময় অতিরিক্ত সময়ও নিই না। তবে পরীক্ষার সময় কাগজ নেমে গেলে বা পাতা ওল্টানোর সময় শিক্ষকেরা সাহায্য করেছেন। ছবি আঁকা হোক বা কম্পিউটার চালানো, কোনও কিছুতেই অসুবিধা হয় না।’
আমেরিকার একটি ব্যাঙ্ক এবং একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে মোটা অঙ্কের টাকার চাকরির সুযোগ এসেছিল। কিন্তু বছরে ৫০ লক্ষ টাকা আয়ের হাতছানি থেকে আপাতত দূরে তুহিন। আরও পড়াশোনা করতে চান। লক্ষ্য, খড়গপুর আইআইটি থেকে এমটেক করার। তার পর পিএইচডি। এখন এমটেকের প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তুহিনের বাবা সমীরণ দে পেশায় ব্যবসায়ী। মা সুজাতা দে। দু’জনেই চান, ছেলে আরও পড়াশোনা করুক। আরও বড় হোক। সুজাতা বলেন, ‘ছেলেকে খাবার পর্যন্ত খাইয়ে দিতে হয়। ও যখন পড়াশোনা করে বইয়ের পাতা উল্টে দিতে হয়। লেখার সময় পেন বা পেন্সিল ওর মুখের সামনে রাখি। ও মুখ দিয়ে তুলে নেয়। নিজের চেষ্টাতেই এগিয়ে যাচ্ছে ও। আমরা সর্বদা ওর সঙ্গে আছি।’ তুহিনের বাবা সমীরণ জানান, ছেলের চিকিৎসার জন্য বহু জায়গায় গিয়েছেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। তিনি বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে কখনও বাধা হিসাবে দেখেনি ছেলে। বরং ও এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছে। পড়াশোনায় খুব আগ্রহী। ও নিজের স্বপ্নপূরণের দিকে পদক্ষেপ করুক। আমরা ওর সঙ্গে আছি।’