০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৮

বাংলাদেশিদের অস্ত্রোপচার বন্ধ করে বিপাকে কলকাতার হাসপাতালগুলো

জেএন রায় হাসপাতাল, কলকাতা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর কলকাতার মানিকতলা এলাকার জেএন রায় হাসপাতাল বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। একই সঙ্গে চিকিৎসা সেবা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার আইএলএস হাসপাতাল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাদেশে ভারতীয় পতাকার অবমাননা এবং দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

এদিকে বাংলাদেশি রোগীদের নির্ধারিত অস্ত্রোপচার এবং অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল ও স্থগিত হতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি রোগীরা কলকাতার হাসপাতালে তাদের অস্ত্রোপচার বাতিল বা অন্য কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পরিকল্পনা করছেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার কিংবা চিকিৎসার জন্য ভর্তি হওয়ার বিষয়ে কলকাতার হাসপাতালগুলোর কাছ থেকে অনুমতি না মেলায় ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে জানা যায়, কলকাতার বিখ্যাত পিয়ারলেস হাসপাতাল আগামী এক সপ্তাহে বাংলাদেশি রোগীদের মধ্যে ২০টি অস্ত্রোপচার করানোর কথা। এই রোগীদের শনিবার থেকে আগামী শুক্রবারের মধ্যে ভর্তি হওয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ তাদের যোগাযোগ করেনি।

এ বিষয়ে পিয়ারলেস হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুদীপ্ত মিত্র গণমাধ্যমটিকে জানিয়েছেন, ‘আমরা তাদের কারও কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছি না। আমরা ধারণা করছি, তারা চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আসতে পারবেন না। তারা এখন ভ্রমণ করতে পারবেন না। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত আরও ১৫ বাংলাদেশি রোগীর অস্ত্রোপচারের সময় নির্ধারিত রয়েছে। আমাদের সন্দেহ, এই রোগীদের কেউই ভর্তি হবেন না। আমাদের হাসপাতালে অনলাইনে পরামর্শ নেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এবং বাংলাদেশি রোগীরা অনলাইনের এই সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এখন পর্যন্ত, কেউ এটি করেননি।’

কলকাতার মনিপাল হাসপাতালের (পূর্ব) আঞ্চলিক সিওও আয়নাভ দেবগুপ্ত বলেন, মণিপালের সব হাসপাতালের ওপিডিতে বাংলাদেশি রোগীদের উপস্থিতি ও ভর্তি মারাত্মক পরিমাণে কমে গেছে। এর ফলে হাসপাতালে অস্ত্রোপচার বাতিল হতে পারে।

আয়নাভ দেবগুপ্ত বলেন, ‘আমরা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে আমাদের পুরোনো রোগীদের চিকিৎসাসেবার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করছি। তাদের মধ্যে কয়েকজন, যারা জরুরি চিকিৎসার কারণে মেডিকেল ভিসা পেয়েছিলেন, তারা এখানেও চিকিৎসা নিয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত নির্ধারিত কোনও অস্ত্রোপচার পিছিয়ে দেয়া হয়নি। তবে অনলাইন পরামর্শ বাড়ছে।’

কলকাতার ডিসান হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীদের অনেকেই চিকিৎসা নেয়ার জন্য যান। এই হাসপাতালে গত মাসে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা নেয়ার হার প্রায় ৭৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে এই সময়ে অন্তত ৫০ জন রোগী হাসপাতালটিতে অনলাইনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হাসপাতালের পরিকল্পনা এবং ভিসা আমন্ত্রণ পত্র (ভিআইএল) দ্রুত ইস্যু করা সত্ত্বেও অনেক রোগীর নির্ধারিত ওপিডি অ্যাপয়েন্টমেন্ট এবং ভর্তি পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।

হাসপাতালটির পরিচালক শাওলী দত্ত বলেন, ‘যে রোগীরা ভ্রমণ করতে পারছেন না, আমরা বাংলাদেশে তাদের চিকিৎসকদের কাছ থেকে সেবা নেয়ার এবং শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসককে জানানোর পরামর্শ দিচ্ছি। পাশাপাশি আমরা আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে অনলাইনে পরামর্শ নেওয়ার প্রস্তাব করছি। এই ভার্চুয়াল পরামর্শ পরিষেবা রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে এবং সময়মত পরামর্শ পেতে সাহায্য করছে।’

কলকাতার বিপি পোদ্দার হাসপাতালে ডিসেম্বরের শেষ দশ দিনের নির্ধারিত প্রায় ৫০টি অস্ত্রোপচার স্থগিত করা হয়েছে। ক্রিসমাসের সময় বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। ওই সময় বাংলাদেশি রোগীদের অনেকেই যেমন- হাঁটু প্রতিস্থাপন এবং মেরুদণ্ডের মাইক্রোস্কোপিক অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনা করেন।

বিপি পোদ্দার গ্রুপের উপদেষ্টা সুপ্রিয় চক্রবর্তী বলেন, ‘এই বছরও আমাদের ২০ থেকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ৫০টি ‘কোল্ড সার্জারি’ সূচি নির্ধারিত ছিল। তবে মনে হচ্ছে সবই পরবর্তী তারিখের জন্য স্থগিত করতে হবে।’ 

গত শুক্রবার হাসপাতালের ওপিডিতে বাংলাদেশি কোনও রোগীই ছিলেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘সোমবারেও আমাদের কোনো ওপিডি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেই। বর্তমানে কলকাতায় থাকা তিনজন বাংলাদেশি রোগী মঙ্গলবার হাসপাতালে চিকিৎসককে দেখাতে পারেন।’

পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের রাজধানীর আরও কয়েকটি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ বলেছে, গত আগস্টে বাংলাদেশি রোগীদের স্বাভাবিক প্রবাহ কমে যায় এবং পূজার পর তা বাড়তে শুরু করে। কিন্তু এখনকার মতো পরিস্থিতি আগে কখনও দেখা যায়নি বলে জানায় তারা।