কারফিউ জারির পরেও উত্তপ্ত মণিপুর
ভারতের মণিপুর রাজ্যে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রোববার (১৭ নভেম্বর) জিরিবাম জেলার জিরি নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দুটি মৃতদেহ। মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদেহ দুটি ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা এবং দুই বছরের একটি শিশুর। মৃতদেহগুলি মুণ্ডহীন অবস্থায় নদীতে ভেসে আসে। এ নিয়ে জিরিবাম জেলায় উদ্ধার হওয়া মৃতদেহের সংখ্যা দাঁড়ালো ছয়টি। মেইতেইরা মনে করছেন, এই মৃতদেহগুলো সেই ছয়জনের, যারা অপহৃত হয়েছিল। অন্যদিকে, কিছু সূত্র জানিয়েছে, নদীতে আরও মৃতদেহ ভেসে আসতে দেখা গেছে, যার ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
গত সোমবার জিরিবাম জেলা, আসাম সীমানার কাছ থেকে অপহরণ করা হয়েছিল ওই ছয়জনকে। এই ঘটনার সঙ্গে কুকি উগ্রবাদীদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। অপহৃতদের মধ্যে তিনটি মহিলা এবং তিনটি শিশু ছিলেন, যারা মেইতেই সম্প্রদায়ের সদস্য বলে জানা গেছে। মৃতদেহ উদ্ধারের পর ইম্ফল-সংলগ্ন এলাকায় মেইতেই জনগণের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়।
বিক্ষোভের মধ্যে, শনিবার রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী, বিজেপি বিধায়ক এবং কংগ্রেস বিধায়কদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এসব বাড়িতে আগুন ধরানো হয়, তবে মন্ত্রী এবং বিধায়করা বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন না। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের পৈতৃক বাড়িতেও হামলা চালানো হয়েছে। স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সাপম রঞ্জন এবং মুখ্যমন্ত্রীর জামাতা আরকে ইমোর বাড়িতেও হামলা হয়েছে। হামলাকারীরা দাবি করেছেন, নিহতদের হত্যাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হোক।
এ পরিস্থিতি মোকাবিলায়, ইম্ফল শহরে শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং সাতটি জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী, সেনাবাহিনী এবং আসাম রাইফেলসের জওয়ানরা মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভ দমন করতে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে, তবে উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি।
মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি মহারাষ্ট্রে ভোট প্রচারের কর্মসূচি বাতিল করে রোববার দিল্লি ফিরে আসেন এবং মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সূত্রে জানা গেছে, সোমবারও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক হবে।
ঘটনার সূত্রপাত মণিপুরের জিরিবামে কুকি জঙ্গি এবং সিআরপিএফ জওয়ানদের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। অভিযোগ, সেই সময় একদল কুকি জঙ্গি মেইতেই সম্প্রদায়ের তিন মহিলা এবং তিন শিশুকে অপহরণ করে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় ১০ কুকি জঙ্গি। যদিও কুকি সম্প্রদায়ের দাবি, নিহত ১০ জন ছিলেন ‘গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী’। জিরিবাম জেলা থেকে একই পরিবারের তিন মহিলা এবং তিন শিশুকে অপহরণের অভিযোগও উঠেছিল কুকি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। ওই ছ’জন ছিলেন মেইতেই সম্প্রদায়ের।