ট্রাম্প দায়িত্ব নিলে দ্রুতই শেষ হবে যুদ্ধ: জেলেনস্কি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন তিনি নিশ্চিত যে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর রাশিয়ার সাথে তার দেশের যুদ্ধ ‘দ্রুত শেষ’ হবে। তিনি জানান ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর ফোনে তাদের মধ্যে যে আলাপ হয়েছে তাতে তারা ‘গঠনমূলক মতবিনিময়’ করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার সাথে আলোচনার বিষয়ে কিছু বলেছেন কি-না সে বিষয়ে জেলেনস্কি কিছু বলেননি। তবে তিনি বলেছেন যে তিনি এমন কিছু ট্রাম্পের কাছ থেকে শোনেননি যা ইউক্রেনের অবস্থানের বিপরীতে যায়। ট্রাম্প ধারাবাহিকভাবে বলে আসছেন যে যুদ্ধ শেষ করা হলো তার অগ্রাধিকার। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেছিলো। ট্রাম্পের মতে কিয়েভকে সামরিক সহায়তার নামে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের অপচয় হচ্ছে।
এর আগে চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস ৬১ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করেছিলো ইউক্রেনের জন্য। দেশটি ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিয়েল ইন্সটিটিউট ফর দ্যা ওয়ার্ল্ড ইকনমির তথ্য মতে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে চলতি বছর জুন পর্যন্ত কিয়েভকে সাড়ে ৫৫ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিংবা উপকরণ পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও দেশটির অভ্যন্তরে ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দেয়ার সমর্থন কমছে, বিশেষ করে রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যে।
নির্বাচনের প্রচারের সময় ট্রাম্প বারবারই যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যদিও কীভাবে সেটি করবেন তিনি তা বিস্তারিত বলেননি।
“এটা নিশ্চিত যে হোয়াইট হাউজে যেই টিম নেতৃত্ব দিবে তাদের নীতি অনুযায়ী যুদ্ধ দ্রুতই বন্ধ হবে। এটাই তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও নাগরিকদের প্রতি তাদের অঙ্গীকার,” ইউক্রেনের একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন জেলেনস্কি।
তিনি বলেন কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় আগামী বছরের নাগাদ যুদ্ধ বন্ধ করতে ইউক্রেনকে সবকিছুই করতে হবে।
অন্যদিকে ২০২৩ সালে ইউক্রেনের বহুল প্রত্যাশিত পাল্টা আক্রমণ ব্যর্থ হবার পর যুদ্ধ পরিস্থিতি একই জায়গায় আটকে আছে। রাশিয়ান বাহিনী দেশটির পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল দখল করে অবস্থান নিয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় দোনবাস অঞ্চলে লড়াই অব্যাহত আছে। শুক্রবার রাশিয়ান বাহিনী পূর্বাঞ্চলের রণাঙ্গনে অগ্রগতি অর্জন করেছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় শহর কুপিয়ানস্ক ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় ভুহলেদারে লড়াই চলছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইন্সটিটিউট ফর দ্যা স্টাডি অফ ওয়ার (আইএসডব্লিউ)।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী রাশিয়ার পদাতিক বাহিনী সীমান্ত এলাকা থেকে খারকিভ অঞ্চলের উত্তর পূর্বাঞ্চলে সীমিত আকারে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে হামলা করেছে ইউক্রেন।
জেলেনস্কি বলেছেন, ওই অভিযানের লক্ষ্য ছিলো রাশিয়ান বাহিনীকে অন্য দিকে ডাইভার্ট করে দেয়া। তবে এই লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে কি না তা তিনি বলেননি। বিশ্লেষকরা বলছেন, কুরস্কের যে এলাকা ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আছে সেটি শান্তি আলোচনায় দরকষাকষির জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
জেলেনস্কি তার ‘বিজয় পরিকল্পনা’ গত মাসেই প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে বলা হয়েছিলো যে ইউক্রেনের ভেতরে ‘বাফার জোন’ তৈরি এড়াতে আক্রমণ অব্যাহত রাখা হবে। তবে যুদ্ধ নিয়ে ইউক্রেন ও বহির্বিশ্বে হতাশা তৈরি হওয়ায় কূটনৈতিক সমাধানের ওপর গুরুত্ব বাড়ছে। যদিও সেই সমাধান কেমন হতে পারে তা এখনো পরিষ্কার নয়। জেলেনস্কি ক্রাইমিয়াসহ যেসব ভূখণ্ড রাশিয়ার দখলে সেগুলো ছেড়ে দেয়ার চিন্তাকে প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রাইমিয়া দখল করেছিলো।
কয়েক বছরের মত পার্থক্য সত্ত্বেও ট্রাম্প দাবি করেছেন যে জেলেনস্কির সাথে তার ভালো সম্পর্ক আছে। গত সেপ্টেম্বরে তাদের মধ্যকার সাক্ষাতের পর ট্রাম্প বলেছিলেন যে তিনি ওই বৈঠক থেকে অনেক কিছু শিখেছেন এবং তিনি দ্রুত যুদ্ধ সমস্যার সমাধান চান। তার প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাটরা তখন ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেছিলো যে তার দৃষ্টিভঙ্গি ইউক্রেনের আত্মসমর্পণের কারণ হতে পারে, যা পুরো ইউরোপকে বিপদে ফেলবে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ফোনালাপ হওয়ার খবর প্রত্যাখ্যান করেছে। ওদিকে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ নির্বাচনের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে কথা বলেছেন। পরে জার্মান সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেছেন সাধারণভাবে যা ধারণা করা হয় তার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নেতার যুদ্ধের বিষয়ে কিছুটা পার্থক্য আছে।
এদিকে ওলাফ শলৎজ এর অবস্থানের সমালোচনা করেছেন জেলেনস্কি। ওলাফ শলৎজ -এর অফিস বলেছে তিনি যুদ্ধ বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। আর জেলেনস্কির মতে এটি রাশিয়ান নেতাকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনাকে দুর্বল করবে।