বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ, ভারতের মেডিক্যাল ট্যুরিজম খাতে বড় ধাক্কা
চলতি অর্থবছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে এসেছে। এতে তাদের আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের শীর্ষ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো।
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস তাদের কর্মীদের ফিরিয়ে নেয় এবং সাময়িকভাবে ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ভারতের মেডিক্যাল ট্যুরিজম বা চিকিৎসা পর্যটন খাতে।
ভারতের শীর্ষ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো আরও জানায়, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশটিতে বিদেশি রোগীর সংখ্যা কমেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসায় তাদের আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।
কেয়ারএজ রেটিংসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের চিকিৎসা নিতে আসা বিদেশি রোগীর মধ্যে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশই আসেন বাংলাদেশ থেকে। এই বিপুল প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম অ্যাপোলো হসপিটালস এন্টারপ্রাইজ (এএইচইএল)।
এএইচইএল জানিয়েছে, বছরের প্রথমার্ধে তাদের বিদেশি রোগীদের থেকে মোট আয় ১৫ শতাংশ কমে গেছে। কারণ বাংলাদেশি রোগীদের থেকে আয় ২৭ শতাংশ কমেছে।
অ্যাপোলো হসপিটালসের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মধু শশীধর বলেন, বাংলাদেশে অস্থিরতার চূড়ান্ত সময়ে রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়, বিশেষ করে যেসব রোগী সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা অন্যান্য সেবার জন্য আসতেন, এখন এই সংখ্যা অনেকটা ফিরে এসেছে। তবে গত বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়নি।’
বর্তমানে ভারত সরকার বাংলাদেশি নাগরিকদের শুধু জরুরি ভিসা দিচ্ছে। কেয়ারএজ রেটিংসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে রোগীর সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। অন্য হাসপাতালগুলোর ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা গেছে।
মণিপাল হাসপাতালের মোট আয়ের প্রায় ১০ শতাংশ আসে আন্তর্জাতিক রোগীদের কাছ থেকে। হাসপাতালটির কলকাতা ও বেঙ্গালুরু কেন্দ্রগুলোতে বাংলাদেশি রোগী প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ আন্তর্জাতিক রোগীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
মণিপাল হাসপাতালের চিফ অপারেটিং অফিসার কার্তিক রাজাগোপাল বলেন, আমাদের কলকাতা ও বেঙ্গালুরু কেন্দ্রগুলোয় বাংলাদেশ থেকে প্রচুর রোগী আসে। জুলাই পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল, এরপর থেকে অবনতি শুরু হয়। সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়, কারণ রোগীর সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
তিনি আরও বলেন, অক্টোবরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে এবং নভেম্বর মাসটি সবে শুরু হয়েছে। বর্তমানে আমরা বাংলাদেশ থেকে স্বাভাবিক আন্তর্জাতিক রোগী প্রবাহের ৬০ শতাংশ পর্যায়ে আছি।
অন্যদিকে ম্যাক্স হেলথকেয়ারের মোট আয়ের ৯ শতাংশ আসে আন্তর্জাতিক ব্যবসা থেকে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে তাদের আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বছরে ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যেটি মূলত অন্যান্য বাজার থেকে রোগীর প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে। তবে বাংলাদেশি বাজার থেকে তাদের আয়ে উল্লেখযোগ্য পতন ঘটেছে।
ম্যাক্স হেলথকেয়ারের সিনিয়র ডিরেক্টর ও প্রধান বিক্রয় ও মার্কেটিং কর্মকর্তা আনাস আবদুল ওয়াজিদ বলেন, বাংলাদেশি বাজার ম্যাক্স হেলথকেয়ারের মোট আন্তর্জাতিক আয়ের প্রায় ৫ শতাংশ জোগান দেয়। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকটের কারণে এই বাজার থেকে আয়ে ৫০ শতাংশ কমে গেছে। বাংলাদেশে আমাদের একটি স্থায়ী অফিস রয়েছে, যা চিকিৎসার জন্য আমাদের হাসপাতালে আসা রোগীদের সহায়তা দেয়।
গত মাসে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা গণমাধ্যমকে জানান, জনবল সংকটের কারণে শুধু জরুরি ভিত্তিতে ভিসা প্রদান করা হচ্ছে।
তবে এটি ভারতের সামগ্রিক হাসপাতাল খাতে বড় প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ এই খাতে চিকিৎসা পর্যটনের অবদান মোটে প্রায় ৩ থেকে ৫ শতাংশ।
অভিবাসন ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে প্রায় ৬ লাখ ৩৫ হাজার চিকিৎসা পর্যটক ভারত সফর করেছেন, যেখানে ২০২২ সালে সংখ্যাটি ছিল ৪ লাখ ৭৫ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৩ লাখ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার চিকিৎসা পর্যটক বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন।