প্রেমে পড়েছিলেন, তবুও অবিবাহিত থাকতে হয়েছে রতন টাটাকে
টাটা গ্রুপের বিশাল সাম্রাজ্যের অভিভাবক রতন টাটা। বুধবার (৯ অক্টোবর) মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। রতন টাটা পুনে কলেজের এক অনুষ্ঠানে তরুণদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘ডোন্ট বি সো সিরিয়াস। এনজয় লাইফ অ্যাজ ইট কামস।’
টাটা গ্রুপের ব্র্যান্ডিংয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রতন টাটার। অর্ধশত বছর ধরে তিনি নিরলস পরিশ্রম করেছেন টাটা গ্রুপের জন্য, তিলে তিলে বড় করেছেন গ্রুপকে। এই অনন্য প্রতিষ্ঠানটির ২১ বছর ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন রতন টাটা। এ সময়ে টাটা গ্রুপের আয় বেড়েছে ৪০ গুণ। আর মুনাফা বেড়েছে ৫০ গুণ।
৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে টাটা গ্রুপের দায়িত্ব পালন করে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিলেও বিয়ে করতে পারেননি রতন টাটা। তবে চারবার প্রেম করেছেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়ে করা হয়নি। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খুব একটা কথা বলেন না তিনি। তবে বেশ কয়েক বছর আগে সিএনএনের সঙ্গে খানিকটা মন খুলে কথা বলেছিলেন তিনি। রতন টাটা বলেছিলেন, প্রেম করলেও বিয়ে করার সাহস আর পাননি। কোনো না কোনো কারণ দেখিয়ে পিছু হটেছেন। বিয়ের ভীতিকে জয় করতে পারেননি। এ কারণে চিরকুমার হিসেবেই কেটে যাচ্ছে তাঁর জীবন।
অবশ্য প্রেমিকাদের নিয়ে খোলাসা করে রতন টাটা কখনো কিছু বলেননি। তবে সাক্ষাৎকারে এটুকু জানিয়েছিলেন যে তাঁর প্রথম ভালোবাসা, প্রথম প্রেমিকা ছিলেন এক মার্কিন তরুণী। আমেরিকায় তখন কাজ করতেন তিনি। প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যেও তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু তাঁকে বিয়ে করতে পারেননি। দ্রুত ভারতে ফিরে আসার কারণে সে সম্পর্ক পূর্ণতা পায়নি। বাকি তিন প্রেমিকা সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য তিনি দেননি।
১৯৩৭ সালে তদানীন্তন বম্বেতে রতন টাটার জন্ম। তার বাবা নভল হরমুসজি টাটাকে দত্তক নিয়েছিল টাটা পরিবার। রতনের বছর দশেক বয়সেই তার বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। সেই সময় থেকেই ঠাকুরমা নভাজিবাই টাটা তার দেখাশোনার ভার নেন। আইনানুগভাবে দত্তক নেন রতনকে।
মুম্বাইয়ের ক্যাম্পিয়ন স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় রতন টাটার। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সেখানেই পড়াশোনা করেন। এরপর তাকে ভর্তি করানো হয় মুম্বাইয়েরই ক্যাথিড্রাল অ্যান্ড জন কনন স্কুলে। পরে তিনি শিমলার বিশপ কটন স্কুল এবং আমেরিকার নিউইয়র্কের রিভারডেল কান্ট্রি স্কুলেও পাঠ নেন। ১৯৫৫ সালে রতন গ্র্যাজুয়েট হন শেষোক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে। ১৯৫৯-এ কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে রতন যে এক আশ্চর্য মানুষ ছিলেন, তা সর্বজনবিদিত। অকৃতদার রতন তার পদ ও মর্যাদার তুলনায় নিরাভরণ জীবনই যাপন করতেন। শান্তনুর স্মৃতিকথা থেকে এক সুরসিক, স্নেহশীল মানুষের পরিচয়ই পাওয়া যায়। নিজস্ব পরিবার না থাকলেও তিনি যে গোটা টাটা গোষ্ঠীকে পরিবার হিসেবেই ভাবতেন, তা তার একাধিক জীবনীকারের লেখায় লভ্য। দফতরে নিজেই গাড়ি চালিয়ে পৌঁছতেন, সফরের সময়ে একাকীত্বই তার প্রিয় ছিল। তিনি ছিলেন একজন প্রশিক্ষিত বৈমানিকও। ২০০৭ সালে ‘এরো ইন্ডিয়া’ শীর্ষক এক প্রদর্শনীতে তিনি সহ-পাইলট হিসাবে একটি এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান এবং বোয়িং এফ-১৮ চালিয়ে চমক দিয়েছিলেন।