১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৬

লেবাননে একসঙ্গে হাজার হাজার ডিভাইসে বিস্ফোরণ ঘটালো ইসরায়েল

লেবাননে একসঙ্গে হাজার হাজার ডিভাইসে বিস্ফোরণ ঘটালো ইসরায়েল  © সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবাননে একসঙ্গে কয়েক হাজার তারবিহীন যোগাযোগের ডিভাইস পেজারে বিস্ফোরণ ঘটেছে। মঙ্গলবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জন নিহত ও ২৮০০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই পেজার খুব একটা ব্যবহৃত না হলেও লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই ডিভাইসটি ব্যাপক হারে ব্যবহার করত। এই সিরিজ বিস্ফোরণের ঘটনায় ইসরায়েলের হাত আছে কি না তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। তবে হিজবুল্লাহর নিরাপত্তায় বড় ধরনের ধাক্কা এই হামলা। 

প্রায় এক ঘণ্টা সময় ধরে দেশটির বিভিন্ন এলাকায় এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে থাকে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে বিস্ফোরণ শুরু হয়ে পরবর্তী প্রায় ১ ঘণ্টা সময় ধরে ডিভাইসগুলো বিস্ফোরিত হতে থাকে। 

লেবাননে যাওয়ার আগে এ ডিভাইসগুলো মোসাদের হাতে এসেছিল। এরপর সেগুলো তারা লেবাননে পাঠায়। কিন্তু এরমধ্যে তারা ডিভাইসটির ব্যাটারির উপর অত্যন্ত উচ্চ বিস্ফোরক পিইটিএন স্থাপন করে দেয়। এরপর দূর থেকে ব্যাটারির তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে ডিভাইগুলোতে গতকাল মঙ্গলবার বিস্ফোরণ ঘটায়।

লেবাননের গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র জানিয়েছে, লেবানন জুড়ে বিপুলসংখ্যক বেতার যোগাযোগ ডিভাইস বিস্ফোরিত হয়েছে। বিশেষ করে বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে হিজবুল্লাহর শক্ত অবস্থান আছে। যার ফলে বিপুলসংখ্যক লোক আহত হয়েছে। তবে ঠিক কতটি পেজার বিস্ফোরিত হয়েছে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানা যায়নি। 

এই বিস্ফোরণের ঘটনার পর লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ক্রাইসিস অপারেশন সেন্টার জরুরি ভিত্তিতে বিপুলসংখ্যক আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব চিকিৎসাকর্মীর ছুটি বাতিল করেছে এবং তাদের নিজ নিজ হাসপাতালে যেতে বলেছে। একই সঙ্গে তাদের পেজার ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে বলেছে।

লেবাননে যেভাবে একসঙ্গে হাজার হাজার ডিভাইসে বিস্ফোরণ ঘটল

দখলদার ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ অত্যন্ত সূক্ষ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছে স্কাই নিউজ অ্যারাবিয়া।

সংবাদমাধ্যমটি এ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যেসব পেজারে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেগুলো পাঁচ মাস আগে লেবাননে যায়। ডিভাইসগুলো ব্যবহার করে লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ।

আরও পড়ুন: নিশ্চিত মৃত্যু থেকে যেভাবে বেঁচে ফিরেন আয়রন ডোম হ্যাক করা ওমর

লেবাননে যাওয়ার আগে এ ডিভাইসগুলো মোসাদের হাতে এসেছিল। এরপর সেগুলো তারা লেবাননে পাঠায়। কিন্তু এরমধ্যে তারা ডিভাইসটির ব্যাটারির উপর অত্যন্ত উচ্চ বিস্ফোরক পিইটিএন স্থাপন করে দেয়। এরপর দূর থেকে ব্যাটারির তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে ডিভাইগুলোতে গতকাল মঙ্গলবার বিস্ফোরণ ঘটায়।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর কয়েকজন যোদ্ধা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের আগে তাদের পেজারগুলো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপরই ডিভাইসগুলো সারাদেশে বিস্ফোরিত হওয়া শুরু করে।

কাতারের সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে লেবানের একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, ডিভাইসগুলোতে যে বিস্ফোরক স্থাপন করা হয়েছে সেগুলোর ওজন ২০ গ্রামের মতো। আর যেসব পেজার বিস্ফোরিত হয়েছে সেগুলো পাঁচ মাস আগে লেবাননে যায়। দূর থেকে কীভাবে এসব ডিভাইসে বিস্ফোরণ ঘটানো হলো সেটি তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

ফোনের চেয়ে ছোট ‘পেজার’ ডিভাইসটি কী?

পেজার হলো একটি তারবিহীন যোগাযোগের ডিভাইস। এটি দিয়ে বার্তা আদানপ্রদান করা যায়। এতে লাগে না কোনো ইন্টারনেট। মোবাইল ফোন সহজলভ্য হওয়ার আগে পেজার ব্যবহারের চল ছিল। তখন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যখাতে এটির ব্যবহার দেখা যেত।

পেজার দুই ধরনের হয়। একটির মাধ্যমে শুধুমাত্র বার্তা পাওয়া যায়। আরেকটির মাধ্যমে বার্তা পাওয়া এবং পাঠানো দুটোই করা যায়। ২০০০ সালের পর মোবাইল ফোনে বাজায় সয়লাব হয়ে যাওয়ার পর পেজারের ব্যবহার একেবারেই নাই হয়ে যায়।

তবে চলতি বছরের শুরুতে হিজবুল্লাহ ব্যাপকভাবে পেজার ব্যবহার শুরু করে। কারণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে দখলদার ইসরায়েলিরা তাদের সহজেই ট্র্যাক করতে পারত। এ কারণে নেটবিহীন পেজার ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে তারা।