০৬ আগস্ট ২০২৪, ১৩:৫৮

দেশত্যাগী হাসিনাকে রাখতে চায় না ভারত

দেশত্যাগী হাসিনাকে রাখতে চায় না ভারত  © সংগৃহীত

ভারত চায়, শেখ হাসিনা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অন্য দেশে চলে যাক। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে সূত্র। তবে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত কোনও মন্তব্য করেনি।

এছাড়া ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে মুখ খোলেনি। অন্যদিকে শেখ হাসিনা যে বিমানে করে ভারতে গিয়েছিলেন তা উড়ে গেছে বলে দেশটির সংবাদসংস্থা এএনআই জানিয়েছে।

ভারতে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানাও তার সঙ্গে আছেন। শেখ রেহানার যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব আছে। তবে শেখ হাসিনাকে যুক্তরাজ্যে যেতে হলে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে হবে। শেখ হাসিনাকে নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিমান ভারতের বাইরে চলে যাবে সেই প্রস্তুতিও নেওয়া হয়ে গেছে বলে সূত্র জানাচ্ছে। বিমানে জ্বালানি ভরার কাজ পর্যন্ত শেষ।

বার্তাসংস্থা এএনআই সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, যে বিমানে করে শেখ হাসিনা ভারতে এসেছিলেন, তা পরবর্তী গন্তব্যে চলে গেছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে তা উড়ে যায়। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী তা মনিটর করছে বলেও জানানো হয়েছে।

শেখ হাসিনা সেই বিমানে আছেন কিনা, তা জানায়নি বার্তাসংস্থা। তবে সূত্রের খবর, শেখ হাসিনা সেই বিমানে যাননি।

শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা কোথাও রাজনৈতিক আশ্রয় চাননি। যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন বলে যে খবর রটেছে, তা ঠিক নয়। তার পরিবার এখন বিশ্বের নানা জায়গায় আছে। তিনি সেখানে তার নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাতেই পছন্দ করবেন।’

সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেলে শেখ হাসিনাকে নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিমান দিল্লির কাছে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে নামে। সেখানে ছিলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। তার সঙ্গে হাসিনার কথাও হয়।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ভারত চায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেখ হাসিনা অন্য দেশে চলে যাক।

কেন হাসিনাকে রাখতে চায় না ভারত?

ও পি জিন্দল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত জানিয়েছেন, ‘মূলত দুইটি কারণে ভারত শেখ হাসিনাকে রাখতে চায় না। প্রথম বিষয়টি অবশ্যই তার নিরাপত্তা সংক্রান্ত। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, বাংলাদেশে যে সরকারই আসুক, ভারত তার সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। আর বাংলাদেশে হাসিনা-বিরোধী মনোভাব তুঙ্গে। ভারত চায় না, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার ঘটনায় ছায়াপাত করুক।’

শ্রীরাধার বক্তব্য, ‘এর আগে সেনা সরকার যখন ছিল, তখন ভারতের অসুবিধা ছিল। কিন্তু এবার সেনা সম্ভবত পেছনে থাকবে, বাংলাদেশে নতুন কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হবে বলে মনে হচ্ছে। ফলে তাদের সঙ্গে ভারতের আলোচনা করতে কোনো অসুবিধা হবে না।’

ভারতের চ্যালেঞ্জ

প্রবীণ সাংবাদিক এবং কূটনীতি বিশেষজ্ঞ প্রণয় শর্মা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ঘটনা ভারতকে একটা বড় চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ভারত চায় না, বাংলাদেশের ঘটনার অভিঘাত দেশের মধ্যে পড়ুক।’

প্রণয় জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশে ভারতের যে সম্পদ ও বিনিয়োগ আছে, ভারত সেগুলোকে নিরাপদ রাখতে চায়। সেদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা চায়।’

বৈঠকের পর বৈঠক

সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিসিএস বা ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটির বৈঠক বসেছিল। সিসিএসের বৈঠকে আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল বাংলাদেশের পরিস্থিতি। সিসিএস হলো নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শীর্ষ কমিটি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর সকলেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

তবে শুধু এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক নয়, সোমবার সকাল থেকে একের পর এক বৈঠক হয়েছে। নানা স্তরে হয়েছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মধ্য়ে হয়েছে। কূটনীতিকদের মধ্যে হয়েছে। নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞকে ডাকা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।

এক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ‘ভারতের এক্ষেত্রে একটা বড় চিন্তা রয়েছে। তা হলো, চীন ও পাকিস্তানকে নিয়ে। ভারতের প্রতিবেশী এই দুই দেশ এই পরিস্থিতিতে কী ভূমিকা নেবে, সেটা ভারতের একটা প্রধান বিচার্য বিষয়।’

বাংলাদেশ  নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গেও কথা বলেছেন। মঙ্গলবার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থাকবেন। অন্তত এই ক্ষেত্রে বিরোধীদের সঙ্গে নিয়েই চলতে চায় সরকার।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে কেন্দ্র যা বলবে, রাজ্য সরকার সেটাই করবে। তিনি বলেছেন, ‘এমন কোনও মন্তব্য করবেন না যাতে সহিংসতা হয়। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। বিজেপি নেতাদের বলছি, আপনারা ইতোমধ্যেই কিছু পোস্ট করছেন। যে পোস্টগুলো করা উচিত নয় বলেই আমার মনে হয়। আমি আমাদের নেতাদেরও জানিয়েছি, কেউ কোনও পোস্ট করবেন না।’ [ডয়চে ভেলে]