০৪ আগস্ট ২০২৪, ১১:২০

‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে বিদেশে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দেশে ফেরার ঘোষণা

বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি ফটো

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের ওয়ালে পোস্ট করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করে এসব পোস্ট করেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সরকার পতনের ১ দফা কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে শিক্ষার্থীরা এসব ঘোষণা দিতে থাকেন।

ঘোষণায় শিক্ষার্থীরা #ReverseBrainDrainBD হ্যশট্যাগ ব্যবহার করেন। শিক্ষার্থীরা ‘স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজে আসতে চাই’ শিরোনামে লিখেন আমরা বিদেশে ছটফট করছি। দেশের জন্য কোনো কাজে আসতে পারলে সেই সুযোগ গ্রহণ করব। তারজন্য আমাদেরকে বিদেশের মতো লাক্সারি সুযোগ সুবিধা দিতে হবে না। শুধু বুমারদের প্রতিবন্ধকতা না থাকলেই হবে। 

ফ্রান্সের গ্রেনোবেল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি থেকে পড়াশোনা করা এহসান সানি লিখেন, ‘আমি বর্তমানে স্পেনের একটি রিসার্চ ইন্সটিটিউট এ কর্মরত আছি। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে রাজপথে থাকতে না পারায় বিদেশে বসে ছটফট করছি। আমি অঙ্গীকার করছি, আমার অ্যাকাডেমিক ও গবেষণার অভিজ্ঞতা দিয়ে দেশের জন্য কোন কাজে আসতে পারলে সেই সুযোগ গ্রহণ করব। সেজন্য বিদেশের মত এত লাক্সারি দরকার নেই। গবেষণা করে না, পড়ানোতে এফোর্ট দেয় না, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে পাশে থাকে না, সর্বোপরি বিবেককে বিক্রি করে দেয় এমন বুমারদের প্রতিবন্ধকতা না থাকলেই হবে ‘

তিনি আরও লিখেন, ‘আমি বিদেশে থাকা অন্যান্য একাডেমিশিয়ানদেরও দেশ গড়ার এই অঙ্গীকার ঘোষণার আহ্বান জানাচ্ছি। আপনি এই লেখা কপি করে আপনার অভিজ্ঞতা যুক্ত করে পোস্ট করুন।’ নিজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে এহসান সানি লিখেন, আমার রিসার্চ এক্সপেরিয়েন্স এমবেডেড সিস্টেম ও হার্ডওয়্যার সিকিউরিটি নিয়ে। এর আগে দেশে আমি বিভিন্ন রোবোটিক্স ট্রেইনিং ও ওয়ার্কশপ এর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। মাস্টার্স এ অধ্যয়নকালীন আমি বিভিন্ন হার্ডওয়্যার সিকিউরিটি ও অ্যাটাকের সাথে পরিচিত হই। সাইবার স্পেস সিকিউরিটি, বিভিন্ন ধরনের অ্যাটাক ও এর ডিফেন্স সিস্টেম নিয়ে আমার গবেষণা।’

একই রকম পোস্টে নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে প্রমা তানজিম আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী লিখেন, ‘আমি সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্কের হান্টার কলেজের একজন শিক্ষার্থী।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আমি কুমিল্লা ম্যাথ অ্যান্ড সায়েন্স ফোরামে বেশ কয়েক বছর মেন্টরিংসহ ২০২০ সাল থেকে গণিত অলিম্পিয়াডের অ্যাকাডেমিক টিম মেম্বার হিসেবে কাজ করেছি। এছাড়াও ১ বছরের মতো ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট টিউটর হিসেবে নিয়োজিত ছিলাম। এখন কাজ কাজ করছি পারশিয়াল ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশন নিয়ে বর্তমান ইউনিভার্সিটির একজন এবং সাথে অন্য আরেক প্রফেসরের সঙ্গে। এছাড়াও আমি ছবি আঁকি। এ যাবৎ বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রদর্শনীতে আমার আঁকা ছবি প্রদর্শিত হয়েছে।’

নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে দেশের উন্নয়নে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে ইবরাহিম মুদ্দাসসের নামে এক শিক্ষার্থী লিখেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াইওমিং-এর একজন পিএইচডি শিক্ষার্থী। আমার পিএইচডি প্রায় শেষের দিকে। এর আগে দেশে আমি জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড, শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস, ম্যাথ অলিম্পিয়াডের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। অ্যাকটিভ লার্নিং-এর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের আনন্দময় গণিত শিক্ষা বিষয়ে আমি কাজ করেছি। এছাড়া আমি বাংলায় বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করি।’ 

নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে দেশের উন্নয়নে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে সৈয়দা তাসনুভা জাহান লিখেন, ‘আমি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান এর শিক্ষক। অন্য অনেকের সাথে আমি SPARQ নামক বিজ্ঞানের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে গবেষণা আলোচনার ভিত্তি তৈরি করেছি।  আমি Universite Paris-Saclay থেকে অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছি।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আমি ইউনিভার্সিটি অব বলগনা থেকে থিওরেটিক্যাল ফিজিক্স বিশেষায়িত আরেকটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছি।  আমি ২০২০ সাল থেকে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞান এর শিক্ষক। আমি ভবিষ্যতে কোলাবোরেটিভ গবেষণার কাজে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে ইচ্ছুক। বাংলাদেশে একটি উন্নত একাডেমিক পরিস্থিতি গড়ে তোলার জন্য আমি আমার ক্ষমতা ও দক্ষতা অনুযায়ী সবকিছু করব। আমি এর জন্য বাংলাদেশে থাকতে ইচ্ছুক, আমি এর জন্য বিদেশে আমার পিএইচডি বা উচ্চতর গবেষণা ভিত্তিক অধ্যয়ন স্থগিত করতে ইচ্ছুক।’

শিক্ষার্থীরা নিজেদের পোস্টে #ReverseBrainDrainBD হ্যাশট্যাগ ব্যাবহার করেন। একই ধরণের পোস্ট করতে দেখা যায়, হিমেল চৌধুরী, এস এম মাশরুক উদ্দিন, মাহিয়া আহমেদ, মিরাজ আহমেদ সাদী, ওমর ফারুক, নুসরাত জাহান মোহ, মারজিয়া মিথিলাসহ অসংখ্য বিদেশী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের।