২১ মে ২০২৪, ১১:৩৬

রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো হাত নেই: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন  © সংগৃহীত

ইরানে রহস্যজনক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুুল্লাহিয়ানসহ সব আরোহী নিহত হয়েছেন। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রাইসির নিহতের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। এটা কী নিছক দুর্ঘটনা নাকী এর পেছনে রয়েছে গভীর কোন ষড়যন্ত্র? ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার যুক্তরাষ্ট্রের কোনো হাত নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। 

গতকাল সোমবার (২০ মে) তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন, যান্ত্রিক ত্রুটি, পাইলটের ভুল কিংবা আরও কিছু হতে পারে। ইরানের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। কিন্তু দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে আমাদের কোনো অন্তর্দৃষ্টি নেই। খবর রয়টার্সের ও চ্যানেলস টেলিভিশন

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রাইসির নিহতের ঘটনাকে সহজভাবে দেখছেন না অনেকেই। জনপ্রিয় এই নেতার মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না ইরানের জনগণ। সেই সঙ্গে মুসলিম বিশ্বেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি ওয়াশিংটন গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছে। ওই বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে আমরা দেশটির জনগণের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই কারীদের সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করছি। 

প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী ওই হেলিকপ্টারটি ছিল বেল-২১২ মডেলের। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই হেলিকপ্টার ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের আগে কিনেছিল তেহরান। সে হিসাবে এটি বেশ পুরোনো। এর আগেও একবার ইরানে এই মডেলের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। হেলিকপ্টারটি অনেক পুরনো মডেলের হওয়াকেও অন্যতম কারণ বলেও মনে করছেন এই বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ।

ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরানে অসংখ্য বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব বিমানের প্রায় সবই যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। সুইজারল্যান্ডের জেনেভাভিত্তিক ব্যুরো অব এয়ারক্রাফট অ্যাকসিডেন্ট আর্কাইভসের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ইরানের ২৫৩টি বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৩৩৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে নিজের দেশের ভেতর কিংবা দেশের বাইরেও বেশ চাপে ছিলেন ইব্রাহিম রাইসি। ২০১৯ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা তাকে নিযুক্ত করেছিলেন বিচার বিভাগের প্রধানের শক্তিশালী পদে। ৬৩ বছর বয়সী রাইসি ২০২১ সালে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

ইরানের দায়িত্বে আসার পর থেকেই তিনি নৈতিকতাবিষয়ক আইন আরও কঠোর করার নির্দেশ দেন। শুধু তা-ই নয়, তাকে বিবেচনা করা হতো একজন কট্টরপন্থি ধর্মীয় নেতা হিসেবে। তিনি তার নিজের দেশেই সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। 

আরও পড়ুন: রাইসির টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার হলো কোরআনের তিন আয়াত

২০১৭ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নাম লেখালেও জিততে পারেননি। পরের বার বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। তবে হ্যাঁ, তার নামে যতই বিতর্ক থাকুক না কেন, ইরানের বেশির ভাগ জনগণের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা তিনি। তিনি যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন ইরান ছিল গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত। সেই সময় তিনি ইরানের হাল ধরেছেন। গত কয়েক বছরে আরও জোরদার করেছেন চীন আর রাশিয়ার সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতি।