সদ্য মা-হারা দৃষ্টিহীন সমীরণ উচ্চ মাধ্যমিকে তুললেন ৯৩ শতাংশ নম্বর
কিছুদিন আগে মাকে হারিয়ে নানারকম চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেত সমীরণ দাসের। মন বসত না পড়াতেও। অথচ সামনে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। এ কারণে আলাদা করে ডেকে তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নরেন্দ্রপুর ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ অসীমচৈতন্য মহারাজ। বুঝেছিলেন তার মনের অবস্থা। তাকে মা সারদা’র কথা মনে করেই এগিয়ে যেতে বলেছিলেন।
এরপর আরও ১১ জনের সঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছেন। ৬৯ দিনের মাথায় ফলও প্রকাশ হলো। এতে সর্বোচ্চ নম্বর ৪৬৯ (৯৩.৮ শতাংশ) পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে সমীরণ। ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সংস্কৃত ও মিউজিক, বাংলা এবং ইংরেজি বিষয়ে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছেন। গান গাইতে ভালোবাসেন তিনি। ভবিষ্যতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান এ দৃষ্টিহীন পড়ুয়া।
এ বারের পরীক্ষায় সমীরণের সহপাঠীরাও ভাল ফল করেছেন। বিশ্বনাথ মোদক ৪৬৭ (৯৩.৪ শতাংশ), কৃষ্ণ গড়াই ৪৬৫ (৯৩ শতাংশ), খোকন কামাট ৪৬৪ (৯২.৮ শতাংশ), জাহাঙ্গীর মোল্লা ৪৬৩ (৯২.৬ শতাংশ), সোয়াল মুদি ৪৫৮ (৯১.৬ শতাংশ), রাজা দে ৪৫৬ (৯১.২ শতাংশ), কার্তিক প্রসাদ ৪৫৫ (৯১ শতাংশ), রাহুল দাস ৪৫৩ (৯০.৬ শতাংশ), দীপ মণ্ডল ৪৫৩ (৯০.৬ শতাংশ), আদিত্য বরনওয়াল ৪৫০ (৯০ শতাংশ) এবং প্রীতম শাহ ৪৪২ (৮৮.২ শতাংশ) নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
আরো পড়ুন: ভারতে মেডিকেল ভর্তির নিট পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র পান ২০ ভর্তিচ্ছু
এদের মধ্যে কেউই পরীক্ষা দিতে বসার ঘরটাকে দেখেননি। খাতার গন্ধ চেনা হলেও তা সাদা রঙের কি না, জানা নেই তাঁদের। কিন্তু তাতে পরীক্ষা দেওয়ার উৎসাহ কমেনি। নতুন কিছু জানার তাগিদে এগিয়ে চলেছেন তাঁরা। এমনটাই বলছেন অধ্যক্ষ অসীমচৈতন্য মহারাজ।
তিনি বলেন, বাকিদের মতো সমীরণের প্রস্তুতি ভালো ছিল। তবে হঠাৎ দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ায় আমরা চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু ও সব বাধা জয় করেছে। শুধু সমীরণই নয়, এ বারের ব্যাচের প্রত্যেকে নজরকাড়া নম্বর পেয়েছে। সবাই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে আগ্রহী। খবর: আনন্দবাজার।