০৫ মার্চ ২০২৪, ১৪:৪৭

দিল্লি বিমানবন্দরে বোমাতঙ্ক ছড়ানোয় বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

বোমাতঙ্ক ছড়ানোয় ভারতের রাজধানীর দিল্লির বিমানবন্দরে এক বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। কলকাতাগামী একটি ফ্লাইটে বিস্ফোরক নিয়ে দিল্লি বিমানবন্দরে ভুয়া ই-মেইল পাঠানোর অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতাগামী একটি ফ্লাইটে বিস্ফোরক আছে দাবি করে দিল্লি বিমানবন্দরে প্রতারণামূলক ই-মেইল পাঠানোর অভিযোগে ২৯ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত ওই বাংলাদেশির নাম মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। মূলত দিল্লি থেকে কলকাতাগামী ওই ফ্লাইটটি যেন বাতিল করা হয় সে লক্ষ্যেই দিল্লির বিমানবন্দরে প্রতারণামূলক ই-মেইলটি পাঠিয়েছিলেন তিনি।

পুলিশ আরও জানায়, গত রোববার মোহাম্মদ নজরুল ইসলামকে কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর প্রতারণামূলক ই-মেইল পাঠানোর পর নিরাপত্তা পরীক্ষার কারণে কয়েক ঘণ্টা বিলম্বের পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ফ্লাইটটি কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

পুলিশ জানিয়েছে, শুধু নিজের স্ত্রীর কাছ থেকে তার আসল পরিচয় গোপন রাখার জন্য নজরুল ইসলাম এই অপরাধ করেছেন। কারণ তিনি তার স্ত্রীকে বলেছিলেন, তিনি (নজরুল ইসলাম) যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণার স্কলার।

মূলত নজরুল ইসলাম তার আসল পরিচয় প্রকাশ না করেই এক নারীকে বিয়ে করেন। তার স্ত্রীর নাম সোনিয়া এবং নজরুল একেক বার একেক অজুহাতে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিতে না চাওয়ার পর পরে তার সন্দেহ হয়। আর এরপরই সোনিয়া তার স্বামীর এই কর্মকাণ্ডের পেছনে সত্য উদঘাটনের সিদ্ধান্ত নেন বলে জানায় পুলিশ।

দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ঊষা রঙ্গনানি বলেছেন, ‘গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেডের নিরাপত্তা অফিসারের কাছ থেকে ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, বিমানবন্দরে কেউ বিস্ফোরক বহন করছে এবং প্রতিটি ব্যাগ ও লাগেজ চেক করার হুমকি-সম্বলিত ই-মেইল পেয়েছে।’

মূলত নজরুলের স্ত্রী সোনিয়া তার ভাইকে ফ্লাইটে করে দিল্লি থেকে কলকাতায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কলকাতায় এসে নজরুল ইসলামের সঙ্গে ২৭ ফেব্রুয়ারি তার দেখা করার কথা ছিল। কিন্তু শ্যালকের কাছে তিনি ধরা পড়তে পারেন এই ভয়ে কলকাতাগামী যে ফ্লাইটে তার শ্যালক উঠতে চলেছেন সেই ফ্লাইট সম্পর্কে নজরুল দিল্লি বিমানবন্দরে ওই ই-মেইল পাঠান।

ডিসিপি বলেছেন, ‘তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ দিল্লির এই বিমানবন্দরে হাই অ্যালার্ট জারি করে। যদিও এই ই-মেইলটি পরে প্রতারণামূলক বলে প্রমাণিত হয়। এছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তি এই ভুয়া বার্তা পাঠানোর জন্য নতুন ই-মেইল ঠিকানা তৈরি করে বলেও তদন্তের সময় পুলিশ দেখতে পায়। পরে পুলিশ জানতে পারে, কলকাতার একটি হোটেল থেকে ই-মেইলটি পাঠানো হয়েছিল।’

পুলিশ সমস্ত অতিথিদের বিশদ জানতে চেয়েছিল এবং তদন্তের সময় দেখা গেছে যে ইসলামের শ্যালক অমরদীপ কুমার ইমেলে উল্লিখিত দিল্লি-কলকাতা ফ্লাইট নেওয়ার পরে তার সাথে দেখা করতে হোটেলে এসেছিলেন।

তবে শেষ পর্যন্ত নজরুল দোষ স্বীকার করেন। পুলিশ জানায়, আত্মীয় যাতে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কলকাতায় পৌঁছাতে না পারেন, সেজন্য তিনি ই-মেইলটি পাঠিয়েছিলেন।

নজরুল ইসলামকে ট্রানজিট রিমান্ডে দিল্লি নেওয়া হয়েছে এবং ভুয়া ই-ইমেইল পাঠানোর দায়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

রাংনানি জানান, নজরুল ইসলাম দাবি করেছেন, তিনি এভিয়েশনের ওপর একটি কোর্স করেন। পাওনাদারদের কাছ থেকে বাঁচতে তিনি ভারতে  থাকছেন।