মিয়ানমারে তরুণ-তরুণীদের সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক হচ্ছে
তরুণ-তরুণীদের বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগদান আগামী এপ্রিল মাস থেকেই শুরুর পরিকল্পনা করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তাদেরও সেনাবাহিনীতে ফিরতে হবে বলে জান্তা মুখপাত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে গণমাধ্যমের খবরে। দেশটির বিভিন্ন স্থানে জান্তা বিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহীদের মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর হিমশিম খাওয়ার মধ্যে এমন ঘোষণা এল।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী। অভ্যুত্থান রক্তপাতহীনভাবে হলেও পরে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে মিয়ানমার জুড়ে তীব্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। জান্তা সরকার কঠোর হাতে ওই বিক্ষোভ দমন করে। বহু বিক্ষোভকারী প্রাণ হারান। গ্রেপ্তার হন আরও অনেকে।
সে সময় বড় বড় শহরগুলোতে বিক্ষোভ দমন করা সম্ভব হলেও বিভিন্ন রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে আদিবাসী বিচ্ছিন্নতাবাদী নানা সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর লড়াই শুরু হয়।
গত বছর শেষভাগে বিচ্ছিন্নতাবাদী কয়েকটি দল জোট গঠন করে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তুমুল আক্রমণ শুরু করে এবং গত কয়েক মাসে সেনাবাহিনীকে হারিয়ে তারা বেশ কিছু এলাকার দখল নিয়েছে।
কোণঠাসা হয়ে পড়া জান্তা সরকার শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে যোগদান সংক্রান্ত একটি আইন জারির ঘোষণা দেয়। এতে বলা হয়, ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী সব পুরুষ এবং ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী সব নারীকে অবশ্যই দুই বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করতে হবে। আর মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) জান্তা সরকার জানাল, এই নিয়ম চালু হচ্ছে এপ্রিল থেকে।
জান্তা মুখপাত্র জ মিন তুন বিবিসি বার্মিজ সার্ভিসকে বলেন, এপ্রিলে নতুন বছরের ছুটির পর আমরা বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য জ মিন তুনকে ফোন করা হলে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে রাষ্ট্রীয় এমআরটিভি মেডিয়া তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর যেসব কর্মকর্তা গত ৫ বছরের মধ্যে অবসরে গেছেন,তাদেরকেও সেনাবাহিনীতে ফিরতে হবে।
তাদের কতজনকে ডাকা হবে এবং কখন ডাকা হবে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু বলেননি তুন। তবে তিনি বলেন, যাদেরকে প্রয়োজন হবে কেবল তাদেরকেই ডাকা হবে।
মিয়ানমারে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ বাধ্যতামূলক করে ‘জনগণের সামরিক সেবা আইন’ ২০১০ সালেই প্রবর্তন করা হয়েছিল। তবে এতোদিন তা কার্যকর করা হয়নি। সেই আইন অনুযায়ী, সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদানের এই আদেশ কেউ অমান্য করলে তার ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।