সপ্তাহের ব্যবধানে মিলছে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির সনদ, নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা
আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়াতে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির ভুয়া সনদের ছড়াছড়ি চলছে। সম্প্রতি নাইজেরিয়ার এক সাংবাদিকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশটিতে শিক্ষার ভুয়া সনদের বিষয়টি সামনে আসে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশটিতে গত ১৫ বছরে গড়ে উঠা ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে দেশটির সরকার।
বছরের ডিগ্রি মিলছে সপ্তাহে
সম্প্রতি নাইজেরিয়ান সাংবাদিক উমর আউদু দেশটিতে ভুয়া সনদের ছড়াছড়ির বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। তার প্রতিবেদন প্রকাশের পর মূলত টনক নড়ে সরকারের। তিনি বলেন, ভুয়া সনদের বিষয়টি নাইজেরিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে।
উমর আউদু বলেন, আপনি অনেক তরুণকে পাবেন যারা ডিগ্রি পাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। এমন পরিস্থিতি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।'
বিষয়টির তদন্ত করতে গিয়ে এই সাংবাদিক ছদ্মবেশে একটি সিন্ডিকেটের সাথে যোগাযোগ করেন। ওই সিন্ডিকেট তাকে ছয় সপ্তাহের মধ্যেই প্রতিবেশি দেশ বেনিন রিপাবলিকের একটি বিশ্বিবিদ্যালয়ে থেকে গণযোগাযোগের উপর একটি ব্যাচেলর ডিগ্রির ব্যবস্থা করে দেয়।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী যেখানে এই ডিগ্রিটি পেতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগে ওই সিন্ডিকেটের সহায়তায় ছয় সপ্তাহেই ডিগ্রি সনদ পেয়ে যান উমর।
এমনকি এই সনদ নিয়ে তরুণদের জন্য নাইজেরিয়া সরকারের ন্যাশনাল ইয়ুথ সার্ভিস ক্রপস স্কিমের আওতায় একটি বাধ্যমতামূলক কোর্সে ভর্তি হতেও তার কোনো অসুবিধা হয়নি। উমরের এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে নাইজেরিয়া সরকার।
এরমধ্যেই বেনিন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশটিতে নিষিদ্ধ করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
জানা গেছে, ঘানা, কেনিয়া, উগান্ডার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিগ্রিও নিষিদ্ধ করতে পারে নাইজেরিয়া সরকার। নাইজেরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ইব্রাহিম শাতাম্বা বলেন, ভুয়া সনদের এমন ছড়াছড়ি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এবং উৎপাদনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়াতে ৪৩টি ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয়, ৪৮টি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে কি হয়েছে, কীভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমন সুবিধা নিয়েছে, এ বিষয়টিই প্রমাণ করছে যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অযোগ্য গ্র্যাজুয়েট তৈরি করেছে।
শাতাম্বা বলেন, যারা এভাবে ফাঁকি দিয়ে ডিগ্রি অর্জন করে, চাকরি জীবনে দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের দক্ষতা এবং যোগ্যতার ঘাটতি থাকে।
সাংবাদিক উমর বলছেন, এই ধরনের কার্যত্রম বন্ধ করার চেষ্টা করে সরকার সঠিক কাজ করছে। যদিও প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে বিভিন্ন মহল থেকে তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এমন কার্যক্রম চলতে দেওয়া উচিত হবে না। আর এভাবে (সিন্ডিকেটের মাধ্যমে) সনদ পাওয়ার বিষয়টি মূলত যারা শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন তাদের প্রতি অবিচার করা হয়। [সূত্র: ডয়চে ভেলে বাংলা]