১৭ দিন লুডু খেলে কাটিয়েছেন ভারতের সুড়ঙ্গে আটকা শ্রমিকরা

ধসে পড়া সুড়ঙ্গ
ধসে পড়া সুড়ঙ্গ  © সংগৃহীত

গত ১২ নভেম্বর ভারতের উত্তরকাশীর একটি সুড়ঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আটকা পড়েন ৪১ শ্রমিক। সেদিন ভোররাতের দিকে নির্মাণ কাজ চলাকালীন সময়ে সিল্কয়ারা সুড়ঙ্গটি ভেঙে পড়ে। এরপর ১৭ দিনের মাথায় গত মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) দীর্ঘ চেষ্টার পর অবশেষে সুড়ঙ্গ থেকে বের করে আনা হয় আটকা পড়া শ্রমিকদের।

সুড়ঙ্গটি ভেঙে পড়ার পর থেকে উন্নত প্রযুক্তির ড্রিল মেশিন, উদ্ধারকারী দল এনে উদ্ধারকাজ শুরু হয়। পাহাড়ের উপর থেকে গর্ত খুঁড়ে চেষ্টা করা হয় শ্রমিকদের কাছে পোঁছানোর। কিন্তু তাতে সুবিধা করতে না পেরে পরবর্তীতে “ব়্যাট-হোল মাইনিং” এর মাধ্যমে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। ধ্বংস্তূপ খুঁড়ে ১৭তম দিনে বের করে আনা হয় শ্রমিকদের। টানা ১৭ দিন ধরে স্যাঁতসেতে সুড়ঙ্গে বন্দি থাকার পর প্রথমে বেরিয়ে আসেন দুই জন শ্রমিক। তার পর বাকিদের বের করে আনা হয়।

৩২ বছর বয়সি জমরা ওঁরাও ভারতের ঝাড়খণ্ডের খুঁটি জেলার বাসিন্দা। তার স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে রেখে মাসে ১৮ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতে যান উত্তরকাশীর সিল্কয়ারা সুড়ঙ্গটিতে। অন্যান্য শ্রমিকদের সাথে তিনিও আটকা পড়েন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকে তাদের সুড়ঙ্গে আটকা পড়ার ঘটনা জানান তিনি।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, কাজ করার সময় ১২ নভেম্বর ভোরের দিকে তারা হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পান। তারপর চোখের সামনেই ধসে পড়ে সুড়ঙ্গের একাংশ। ভরসা বলতে ছিল সুড়ঙ্গে কাজ করার জন্য লাগানো বৈদ্যুতিক বাতি।

জমরার কথায়, আমরা প্রাণ বাঁচাতে পড়িমরি করে দৌড়েছিলাম, লাভ হয়নি। কেউ বেরোতে পারিনি আমরা। সকলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারি, আমরা আটকা পড়েছি। তখন সবাই অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। ভয় লাগছিল অনেক। তবে আশা না ছেড়ে সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করি।

জমরা জানায়, সুড়ঙ্গে আটকে পড়ার পর টানা ২৪ ঘণ্টা কিছু না খেয়ে থাকতে হয়েছিল তাদের। তারপর প্রথমবার খাবার হিসাবে মুড়ি এবং এলাচ পায় তারা। আর সে খাবার খেয়েই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শক্তি পেয়েছে। খাবার আসার পর তারা বুঝতে পারেন যে কেউ ঠিক তাদের উদ্ধার করতে আসবে। এতে তাদের আশা আরও বেড়ে যায়।

জমরা আরও জানায়, কংক্রিটের সুড়ঙ্গের মধ্যে সময় পার করতে মোবাইলের গেমই ছিল তাদের ভরসা। মোবাইলে লুডো খেলে সময় পার করতেন তারা। আর বাইরে থেকে চার্জার পাঠানোয় তাদের ফোন চার্জ করতে সমস্যা হয়নি। তবে নেটওয়ার্ক না থাকায়, কারো সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ হয়নি। মোবাইলে গেম খেলে, একে অপরের সঙ্গে সুখ দুঃখের কথা বলে সুড়ঙ্গের মধ্যে সময় কাটিয়েছিলেন তারা।

সুড়ঙ্গে আটকা পড়া বেশিরভাগ শ্রমিকই ছিলেন ঝাড়খণ্ডের অধিবাসী। ১৭ দিন লাগাতার পরিশ্রমের পর গতকাল মঙ্গলবার তাদের উদ্ধার করা হয়। যারা যারা তাদের উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আটকা পড়া শ্রমিকরা।।


সর্বশেষ সংবাদ