০৩ নভেম্বর ২০২৩, ১১:১৮

টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

  © সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিন বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) ‘শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন, নেতৃত্ব ও ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। 

টাইম ম্যাগাজিন লিখেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন এক বিস্ময়কর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যার হাত ধরে ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশ নিতান্ত পাট উৎপাদনকারী থেকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলা হয়েছে, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের পর ২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা বিশ্বে সবচেয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা নারী রাষ্ট্রপ্রধান। এই সময়ের মধ্যে ইসলামী মৌলবাদী শক্তি ও সামরিক হস্তক্ষেপকারী উভয়পক্ষকেই পরাস্ত করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তিনি। তিনি মার্গারেট থ্যাচার বা ইন্দিরা গান্ধীর চেয়ে বেশিবার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি আগামী জানুয়ারিতে আবারও জাতীয় নির্বাচনে লড়তে যাচ্ছেন এবং এই লড়াইয়েও জেতার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
 
গত সেপ্টেম্বরে এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা টাইমকে বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমার জনগণ আমার সঙ্গে আছে। তারাই আমার প্রধান শক্তি।’
 
রাজনীতির ময়দানে শেখ হাসিনার লড়াই-সংগ্রামের কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনীতিতে আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এখন পর্যন্ত ১৯ বার গুপ্তহত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সমর্থকরা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে শতাধিক মানুষ গ্রেফতার হয়েছে।

পুলিশের গাড়ি ও গণপরিবহনে আগুন দেয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় প্রাণ গেছে কয়েকজনের। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো বিএনপি আবারও নির্বাচন বয়কট করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। দলটির দাবি, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে দিতে হবে।
 
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সদস্যের সংখ্যার দিক থেকে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবদান সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশি অভিবাসীরা এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে বাণিজ্যিক ও শিল্প সমাজের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
 
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগের বৃহত্তম উৎস এবং বাংলাদেশি পণ্য রফতানির শীর্ষ গন্তব্য। ইউক্রেনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসনের নিন্দা জানানো উন্নয়নশীল বিশ্বের কয়েকজন নেতাদের মধ্যে একজন শেখ হাসিনা, যিনি পশ্চিমাদের কাছে নিজেকে বারবার প্রয়োজনীয় হিসেবে প্রমাণ করেছেন। তিনি প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন।
 
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিটি ক্ষেত্রে চীনের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক উপস্থিতির মোকাবিলা করতে মরিয়া। যা তাদের সরকারি নীতি থেকেই স্পষ্ট। আর সেই নীতি থেকেই ‘ওয়াশিংটন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নীতির বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে একটি পরীক্ষাক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে বলে মনে হচ্ছে।

তবে এই বিশ্লেষকের মতে, এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় একটি ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। আর তা হলো, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে বাংলাদেশের ওপর তারা যে চাপ দিচ্ছে তার বিপরীত ফল হতে পারে।
 
শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক সাফল্য প্রশংসনীয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালে জিডিপির পরিমাণ ছিল মাত্র ৭১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬০ বিলিয়ন ডলারে। শুধু তাই নয়, এক সময় বাংলাদেশ খাদ্য সংকটের দেশ হলেও এখন খাদ্য রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।
 
সামাজিক সূচকগুলোও উন্নত হয়েছে। প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৯৮ জন মেয়ে শিশুই বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করছে। বাংলাদেশ হাইটেক ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। স্যামসাংয়ের মতো আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি চীন থেকে সাপ্লাই চেইন সরিয়ে বাংলাদেশমুখী হচ্ছে।
 
জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার লড়াইয়ের প্রশংসা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও জলবায়ু সংকটের মধ্যে রয়েছে। প্রায়ই ঘূর্ণিঝড় এই ব-দ্বীপে আঘাত হানে। ফলে বছরে প্রায় ১০০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়। অন্যদিকে সমুদ্রের পানিস্তর ক্রমশ বেড়েই চলেছে। যা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার আয়তনের চারগুণ বেশি জনসংখ্যার জীবন ও জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। যার জন্য দায়ী মূলত উন্নত বিশ্বের দেশগুলো।