শিক্ষার্থীদের বিচার চেয়ে অনশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

শিক্ষার্থীদের বিচার চেয়ে অনশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
শিক্ষার্থীদের বিচার চেয়ে অনশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য  © সংগৃহীত

অতীতে যাদবপুরসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি কিংবা বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। কিন্তু সেই চেনা ছবি বদলে দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ। শিক্ষার্থীদের বিচার চেয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও ডিনদের নিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য তিনি অনশনে বসেছেন।

বুধবার (১১ অক্টোবর) রাত ১১টা থেকে ক্যাম্পাসের অরবিন্দ ভবনের পার্কিংয়ের স্থানে এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা।

জানা যায়, সম্প্রতি ব়্যাগিংয়ের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে এক ছাত্রের মৃত্যু ঘিরে উত্তাল হয়েছিল যাদবপুরের ক্যাম্পাস। সে ঘটনার সুরাহা করতে গিয়ে বারবার শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমন পরিস্থিতির প্রতিবাদ জানিয়ে এ কর্মসূচি শুরু করেছেন উপাচার্য।

সভা ঘিরে বিতণ্ডা
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে চলে ইসি বৈঠক। আমীমাংসিত ভাবে শেষ হয় সেই আলোচনা। বুধবার ফের নীতি নির্ধারক সংস্থা ইসির বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকের আলোচ্য বিষয় মনঃপুত হয়নি পড়ুয়াদের একাংশের। তুমুল স্লোগান দেন ছাত্ররা।

এই পরিস্থিতিতে সভার কাজ ভেস্তে যায়। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের হাতে উপাচার্যসহ কাউন্সিলের অন্য সদস্যদের ‘হেনস্থা’, ‘অপমানিত’ হতে হয়েছে বলে অভিযোগ। টানা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে এই পরিস্থিতি চলে।

বুদ্ধদেব বলেছেন, "ইসি বৈঠক ঠিকভাবে করতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা এক ধরনের ব়্যাগিং। পড়ুয়ারা কতগুলো দাবি নিয়ে এসেছিল। তাদের বক্তব্য সেই দাবির সমাধান এখনই করতে হবে। আমরা প্রথম তাদের ঢুকতে দিইনি। তারপর তারা একপ্রকার জোর করেই বৈঠকে ঢোকে।"

অবস্থানে রাতভর ছিলেন যাদবপুরের ইংরেজির অধ্যাপক মনোজিৎ মণ্ডল। তিনি বলেন, "এক ছাত্রের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু হয়েছে। আমরা তার সুবিচার করতে পারছি না নানা বাধায়। উল্টো আমাদের সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদে অবস্থান বিক্ষোভ ছাড়া আর উপায় ছিল না।"

আরও পড়ুন: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন ছাত্রের বর্ণনায় 'হোস্টেলে র‌্যাগিং'

শিক্ষার্থীদের বক্তব্য
বিক্ষোভকারী ছাত্ররা উপাচার্যের বক্তব্য খারিজ করে দিয়েছেন। তাদের পাল্টা দাবি, ছাত্র সংক্রান্ত কোনো কমিটি হলে সেখানে হোস্টেলের প্রতিনিধি রাখতে হবে। হোস্টেলের ১৫টি ব্লকের প্রতিটি থেকে একজন করে প্রতিনিধি চাই। কর্তৃপক্ষ তা মানতে চাইছেন না।

প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়া হোস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে মারা যাওয়ার পর এ নিয়ে তুমুল বিতণ্ডা হয়। ইউজিসির নির্দেশ অনুযায়ী কেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আলাদা হোস্টেলে রাখা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

এরই মধ্যে আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বুদ্ধদেব সাউ তাদের কথা শোনার সময় দেন না। তিনি ক্যাম্পাসে একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চান।

অনির্দিষ্টকালের অনশন
এই টানাপোড়নের মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত অবস্থান অনশন চালিয়ে নিচ্ছেন উপাচার্য ও কাউন্সিলের সব সদস্য। শিক্ষার্থীরা ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। এদিন সেখানে বসে ফাইলে সই করেন উপাচার্য ও ডিনরা। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ক্ষমা চাইবেন, এমন কোনো ইঙ্গিত এখনো মেলেনি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজে অভিজ্ঞ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, "বৈঠকে ঢুকে ছাত্ররা অসম্মানজনক কথা বললে সেটা নিন্দনীয়। কিন্তু এ কাজের জন্য ওই ছাত্রদের শাস্তি দেয়ার কাঠামো বা সাহস কর্তৃপক্ষের নেই। তাই উপাচার্য অনশনে বসেছেন, এটা একেবারে হাস্যকর। "

বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ছাত্রী ও অধ্যাপিকা মীরাতুন নাহার বলেন, "আমরা যখন পড়েছি, পড়িয়েছি, তখন এ ধরনের ঘটনা কল্পনার অতীত ছিল। এ জন্য শুধু শিক্ষার্থীদের দায়ী করলে হবে না। কর্তৃপক্ষ, পড়ুয়া, প্রশাসন সকলকেই দায় নিতে হবে। অনশনে বসা কোনো পন্থা নয়। বরং দেখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোথায় ত্রুটি আছে। [সূত্র: ডয়চে ভেলে বাংলা]


সর্বশেষ সংবাদ