হামলা-পাল্টা হামলায় যুদ্ধ পরিস্থিতি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনে, যোগ দিল লেবানন
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মধ্যে লড়ায়ে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আহত উভয় দেশের ৩ হাজারের বেশি মানুষ। খবর আল-জাজিরা।
শনিবার (৭ অক্টোবর) ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক রকেট হামলার পর যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। ফলে হামলা-পাল্টা হামলায় দুই দেশে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জরুরি অবস্থাও জারি করেছে দেশটি। এমন মুহূর্তে আরেক প্রতিবেশী দেশ লেবানন থেকে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ। তবে এরপরই লেবানন ভূখণ্ডের দিকে পাল্টা হামলা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। রোববার (৮ অক্টেবর) এসব তথ্য জানিয়েছে বিবিসি ও আলজাজিরা।
লেবানন থেকে ইসরায়েলে হামলা চালালোন বিষয়টি স্বীকার করে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহএক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রচুর আর্টিলারি শেল ও গাইডেড মিসাইল দিয়ে রাডার সাইট, জিবদিন ও রুওয়াইসাত আল-আলম এলাকায় বোমা হামলা করা হয়েছে। আমরা অধিকৃত লেবানিজ শেবা ফার্মস এলাকায় তিনটি ইসরায়েলি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে।
এই এলাকাটি ইসরায়েল, লেবানন ও সিরিয়ার সংযোগস্থল। তিন দেশই এই এলাকার মালিকানা দাবি করে আসছে। তবে হিজবুল্লাহর হামলার জবাবে মাউন্ট ডভ এলাকায় অবস্থিত হিজবুল্লাহর আস্তানায় ড্রোন হামলা করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইতিহাসর সবচেয়ে বড় এই হামলা চালিয়েছে শনিবার। ইসরায়েলের সীমানায় ঢুকে পায় ২২টি স্থানে অবস্থান নিয়ে ইসরায়েল বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়ায় হামাস। দখলে নেই সামরিক ঘাঁটিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এ পর্যন্ত ইসরায়েলে সাত হাজারের বেশি রকেট হামলা চলিয়েছে তারা। ইসরায়েলের শতাধিক সামরিক ও বেসামরিক মানুষকে জিম্মি করারও খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনার পর ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় বড় ধরনের যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা যুদ্ধের মধ্যে আছি, এটা কোনো অভিযান নয়, কোনো উত্তেজনা নয়, এটা যুদ্ধ।’
এদিকে হামাস ও ইসরায়েলের এই যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী হোসেইনি খামেনির উপদেষ্টা রাহিম সাফাভি এই হামলাকে সমর্থন করে এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিন ও জেরুজালেম স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত ফিলিস্তিনের যোদ্ধাদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, হামাসের এ হামলা ইসরায়েলের দখলদারির বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের আস্থা বাড়াবে।
আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে ২ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এক বিবৃতিতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে এই সংঘাতের দ্রুত সমাপ্তি চেয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের একটি অংশ এবং ইসরায়েলি দখলদারি বাহিনীর মধ্যে সংঘাতের ঘটনা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এ ঘটনা একাধিক এলাকায় বড় ধরনের সন্ত্রাসের সৃষ্টি করেছে।
আরব লিগের প্রধান আহমেদ আবুল ঘেইট গাজায় সামরিক অভিযান দ্রুত বন্ধের দাবি করেছে। দুই পক্ষের সশস্ত্র লড়াইয়ের অবসান চেয়ে আহমেদ আবুল বলেন, ‘ইসরায়েলের চলমান সহিংস ও চরমপন্থী নীতির বাস্তবায়ন একটি টাইমবোমার মতো। এটি এ অঞ্চলকে অদূর ভবিষ্যতে স্থিতিশীলতার বড় কোনো সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে।’
তবে ইসরায়েলের উপর হামাসের এই হামলাকে তীব্র সন্ত্রাসী হামলা আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় কমিশন। হামলার পর হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রেসিডেন্ট (জো বাইডেন) এ ঘটনার দিকে দৃষ্টি রাখবেন। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা ইসরায়েলি সহযোগীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্র দ্ব্যর্থহীনভাবে ইসরায়েলের সাধারণ নাগরিকদের ওপর হামাসের এই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানায়। সন্ত্রাসের পক্ষে কোনো যুক্তি কখনোই থাকে না। ইসরায়েলের সরকার ও জনগণের পক্ষে আমরা আছি।’
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডা লেন এক্সে দেওয়া তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের সন্ত্রাসী হামলায় আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা জানাই। এ ধরনের ঘৃণ্য হামলার বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করার অধিকার ইসরায়েলের আছে।’