২৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:১৩

ভারতের আগে যেসব দেশ পা রেখেছে চাঁদের মাটিতে

ভারতের আগে যেসব দেশ পা রেখেছে চাঁদের মাটিতে  © সংগৃহীত

গতকাল ভারতের চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করেছে। অবশেষে অপেক্ষার অবসান। এর মধ্য দিয়ে ভারত প্রথমবার চাঁদে সফলভাবে নভোযান পাঠানোর মাধ্যমে ইতিহাস তৈরি করলো। বুধবার (২৩ আগস্ট) ভারতের স্থানীয় সময় ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান-৩ অবতরণ করে। টানা ৪০ দিনের অপেক্ষার পর নতুন এ ইতিহাস গড়ল ভারত।

ল্যান্ডার বিক্রমের অবতরণ প্রক্রিয়া ৫টা ৪৫ মিনিটে শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। অবতরণ প্রক্রিয়া শুরুর পর বিক্রমের গতি ১,১৫০ মিটার প্রতি সেকেন্ডে কমিয়ে আনা হয়। চারটি ইঞ্জিনের মধ্যে দুটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যের পর ভারত জুড়ে উৎসবের আমেজ। আবেগে ভাসছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। তৃতীয় বিশ্বের দেশের চোখ টাটিয়ে দেওয়া সাফল্যে শুভেচ্ছা বার্তা আসছে প্রথম বিশ্বের দেশগুলি থেকেও।

তবে চাঁদে অবতরণ করা প্রথম দেশ নয় এটি। এর আগে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এই অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করে।

রাশিয়া: চাঁদকে প্রথম ছুঁয়েছিল রাশিয়া। গোটা বিশ্বে সেদিন ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় লেখা হয়েছিল। চাঁদের মাটিতে মহাকাশযানের প্রথম সফল অবতরণ করায় রাশিয়া। ১৯৫৯ সালের  ১২ সেপ্টেম্বর 'লুনা ২" চন্দ্রযান চন্দ্রপৃষ্ঠে সফল অবতরণ করে। 

আমেরিকা: চাঁদকে ছোঁয়ার লক্ষ্য ছিল আমেরিকারও। ঠিক ১০ বছর পর ১৯৬৯ সালে চাঁদের বুকে প্রথম মানুষ পাঠায় আমেরিকা। অ্য়াপেলো মিশনে সফল ভাবে চাঁদের মাটিতে অবতরণ করে মানুষ। সেদিন অ্য়াপোলো-১১ অভিযানের সময় যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবার চাঁদে দেশের পতাকা স্থাপন করে। এরপর একাধিক চন্দ্রাভিযান করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

চীন: ময়দানে ছিল নতুন খেলোয়াড়ও। তার নাম চিন। এরপর সফল চন্দ্রাভিযান ছিল চিনের চ্যাংই-৩ মিশন। ২০১৩ সালে চন্দ্রপৃষ্ঠে সফল অবতরণ করে চ্যাংই-৩। ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি চীন চাঁদের অদেখা একটি দিকে রোভার অবতরণকারী প্রথম দেশের রেকর্ড গড়ে। 

২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২-এর ব্যর্থতার পর চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় ইসরোর চাঁদের মাটি ছোঁয়ার স্বপ্ন। কান্নায় ভেঙে পড়েন ইসরোর সাবেক চেয়ারম্যান কে শিবন। কিন্তু দমে যাননি তারা। নেমে পড়েন চন্দ্রযান-৩-এর কাজে। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে চাঁদের মাটি ছোঁয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ইতিহাস তৈরির লক্ষ্যে নতুন করে পথ চলা শুরু করে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।

চন্দ্রযান-১ এবং চন্দ্রযান-২-এর মতোই চন্দ্রযান-৩ খুব ব্যয়বহুল অভিযান ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া চাঁদের অভিযানে যে অর্থ খরচ করে, তার তুলনায় অনেক কম। চন্দ্রযান-৩-এর বাজেট ছিল ৬১৫ কোটি টাকা। সাড়ে তিন বছর পরিশ্রমের পর ইসরোর ঘোষণা দেয় ১৪ জুলাই চাঁদের দেশে পাড়ি দেবে চন্দ্রযান-৩।

ঘোষণা অনুযায়ী ১৪ জুলাই চন্দ্রযান-৩ শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে যাত্রা শুরু করে। ইসরোর এই চন্দ্রযানের কেন্দ্রে ছিল এলভিএম-৩ রকেট। যা চন্দ্রযানটিকে শক্তি জুগিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে ঠেলে দিয়েছিল। এলভিএম-৩ একটি ত্রিস্তরীয় উৎক্ষেপণ যান। এর আগে একাধিক কৃত্রিম উপগ্রহ এবং চন্দ্রযাত্রায় এই এলভিএম-৩ ব্যবহৃত হয়েছে। একে ভারতীয় রকেটের ‘বাহুবলী’ বলা হয়।

চাঁদে নভোযান পাঠানো চতুর্থ দেশ এখন ভারত। চন্দ্রযানের সফল অবতরণের জন্য ভারতের সব ধর্মের উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছিল। এর আগে চাঁদে সফল অবতরণ করেছিল মাত্র তিনটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো ভারত।