২২ আগস্ট ২০২৩, ১০:০৪

শিক্ষার্থীর মৃত্যু: র‌্যাগিং রুখতে বিশেষ দল করছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

হোস্টেল ও ক্যাম্পাসে র‌্যাগিং রুখতে বিশেষ দল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কিলোমিটারের মধ্যে থাকবে এই দল। ক্যাম্পাস ও হোস্টেলে অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে কিংবা এ সংক্রান্ত অভিযোগ পেলে দলটি দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ ছাড়া সিসি ক্যামেরা বসানো, শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা জানার জন্য কাউন্সেলিং করার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও বৈঠকের পর জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্র্বতীকালীন উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ। তিনি জানান, সিসি ক্যামেরা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আপত্তি থাকলে আলোচনায় বসবে কর্তৃপক্ষ।

গত ৯ অগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় হস্টেলে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে। তদন্তে নেমে ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে নানা মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলায় র‌্যাগিং মোকাবিলায় পদক্ষেপ করতে চাইছে কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গাইডলাইন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা নেই কেন, এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অন্য দিকে সিসি ক‌্যামেরার নজরদারিতে আপত্তি শিক্ষার্থীদের একাংশের। তাঁদের দাবি, এ ভাবে কর্তৃপক্ষ ‘নজরদারির ঘেরাটোপে’ রাখতে চায় শিক্ষার্থীদের। তবে উপাচার্য জানিয়েছেন, সিসি ক্যামেরা বসছেই।

তিনি বলেন, ‘সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়নি এমন নয়। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে সিসি ক্যামেরা আছে। আরও কিছু ডিপার্টমেন্টে বসানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। আগে ধীর গতিতে কাজ চলছিল। এখন দ্রুত কাজ হবে। গণিত এবং ভূগোল বিভাগের শ্রেণিকক্ষে সিসি ক্যামেরা আছে। পড়ুয়ারা কোনও প্রতিবাদ জানাননি। বাকি বিভাগেও আমরা ক্যামেরা বসাচ্ছি।

উপাচার্য জানান, নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং হোস্টেলের বিভিন্ন গেটে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। প্রত্যেকটি ভবনের ‘এন্ট্রি পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা থাকবে। তা ছাড়া করিডোরে সিসি ক্যামেরা রাখা যায় কি না, আলোচনা চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন একাধিক প্রাক্তনী। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কেন ‘বহিরাগত’ ঢোকেন, তা নিয়ে ছাত্রদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন। এরই প্রেক্ষিতে ‘লগবুক’ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কাউকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকতে হলে লগবুকে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে হবে। হোস্টেলের আবাসিকদের জন্য আলাদা পরিচয়পত্র দেওয়া হবে।

সে প্রক্রিয়া শেষ হলে যাঁদের কাছে ওই পরিচয়পত্র থাকবে, তাঁরা নিরাপত্তারক্ষীকে দেখিয়ে হোস্টেলে প্রবেশ করবেন। বাকিদের ক্ষেত্রে ‘লগবুকে’ নাম নথিভুক্ত করতে হবে। তারও কয়েকটি গাইডলাইন থাকবে বলে জানাচ্ছেন অন্তর্র্বতীকালীন উপাচার্য। তিনি বলেন, কারা এ লগবুকের সাহায্যে এন্ট্রি পাবেন, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।

পড়ুয়াদের মানসিক সুস্থতার দিকে নজর দেওয়ার জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে। কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্বে থাকবেন শিক্ষকেরাই। সেখানে পড়ুয়ারা নিজেদের অসুবিধার কথা বলতে পারবেন। র‌্যাগিংয়ের মতো কোনও ঘটনা ঘটছে কি না, তা নিয়ে পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সঙ্গেও কথা বলবে কমিটি। পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখার জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকেও দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ।

র‌্যাগিং রুখতে অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি রয়েছে। তারপরেও র‌্যাগিংয়ের কারণে ছাত্রমৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ওই কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এ বার অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটিকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে, গত তিন বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ নিয়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন হয়েছে। এ অবস্থায় দ্রুত ছাত্র সংসদ তৈরির জন্য পদক্ষেপ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

এ নিয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানানো হবে। সোমবারের এ বৈঠকে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানরা। উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুও। আনন্দবাজার।