যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের আরেক নাম ‘ইন্ট্রো’
ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপের মৃত্যু নিয়ে দেশজুড়ে চলছে তোলপাড়। বুধবার (৯ আগস্ট) রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হোস্টেলের এ-২ ব্লকের নীচ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। পরেরদিনই ভোরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পরই ভয়াবহ র্যাগিং চলার অভিযোগ উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের এই বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ভারতের স্থানীয় গণমাধ্যমের থেকে জানা যায়, ‘ইন্ট্রো’ শব্দটা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষার্থীদের বা হোস্টেলে আবাসিকদের কাছে স্রেফ ইংরেজি শব্দ ‘ইন্ট্রোডাকশন’-র (পরিচিতি) সংক্ষিপ্ত রূপ নয়। ওই একটা শব্দ তাদের কাছে বিভীষিকা। ‘ইন্ট্রো’-র নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিদিন ঘড়ির কাঁটা ১১টা বা ১২টা ছুঁলে হোস্টেলের প্রতিটি দরজায় ধাক্কা দিতে হয়। সেই সময় নামমাত্র পোশাক পরে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের (উল্লেখ্য, স্বপ্নদীপের নগ্ন দেহ উদ্ধার করা হয়)। সিনিয়ররা দরজা খোলার পর গড়গড় করে কয়েকটি বিষয় মুখস্থ বলতে হয়। কী কী বলতে হবে, সেটার একটা নির্দিষ্ট ‘ফরমেটও’ আছে। নিজের নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, জন্মতারিখ, বাবা-মায়ের মিলনের তারিখ, শিক্ষাগত যোগ্যতা বলতে হয়। সেখানেই রেহাই মেলে না। নিজের শারীরিক গঠনের বর্ণনা দিতে হয়। আর ‘ইন্ট্রো’-র সময় মুখ ফসকে ইংরেজি শব্দ বেরিয়ে গেলেই করা হয় শারীরিক অত্যাচার। দরজার খিল দিয়ে হাঁটুতে মারা হয়। নয়তো কান ধরে উঠবোস করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
স্বপ্নদীপকেও সে রকম বিভীষিকার শিকার হতে হয়েছিল কি না, র্যাগিংই তার প্রাণ কেড়েছে কি না, তা এখনো প্রমাণিত হয়নি। তবে শুক্রবার রাতে সৌরভ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে যাদবপুর থানার পুলিশ। স্বপ্নদীপের বাবার দায়ের করা এফআইআরে তার নাম ছিল। তার নেতৃত্বেই ছেলেকে অত্যাচারিত হতে হয়েছিল বলে দাবি করছে স্বপ্নদীপের পরিবার।
আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এ বছরেই আয়োজনের চিন্তা
পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে রামপ্রসাদ জানিয়েছেন, স্বপ্নদীপ উচ্চমাধ্যমিকের পর গত ৩ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে স্নাতক স্তরে ভর্তি হয়। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে থাকার সুযোগ পায়নি বলেও অভিযোগপত্রে জানান রামপ্রসাদ। ৩ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একটি চায়ের দোকানে তাঁর সঙ্গে সৌরভের আলাপ। আবাসিক না হয়েও ‘গেস্ট’ হিসাবে হোস্টেলে যে থাকা যায়, সে কথা তিনি সৌরভের মাধ্যমে জানতে পারেন বলে দাবি করেছেন রামপ্রসাদ। তাঁর দাবি, সৌরভই মনোতোষ নামে আরও এক ছাত্রের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন স্বপ্নদীপের।
রামপ্রসাদ অভিযোগপত্রে লিখেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়েরই দুই ছাত্র সৌরভ চৌধুরী (প্রাক্তন) এবং মনোতোষ মণ্ডল (সোশিওলজি, দ্বিতীয় বর্ষ)-এর মাধ্যমে আমার ছেলে হোস্টেলের ৬৮ নম্বর ঘরে থাকার সুযোগ পায়। ঘরটি এ-২ ব্লকের তিন তলায়। ৬ অগস্ট থেকে ছেলে হোস্টেলে থাকা শুরু করে। শেষ বার স্বপ্নদীপ মাকে ফোন করে কেঁদে ফেলেছিলেন। বুধবার (৭ অগস্ট) রাত সাড়ে ৮টা-৯টা নাগাদ স্বপ্নদীপ আমাকে ফোন করে বলে, ‘আমার খুব ভয় করছে। আমাকে হোস্টেল থেকে এখনই নিয়ে যাও।’ এর পর ওর সঙ্গে ফোনে কথা হয়নি। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ আমার স্ত্রীকে ওখান থেকে এক জন ফোন করে জানায় যে, আমার ছেলে উপর থেকে পড়ে গিয়েছে। তার পর আমার ছেলে মারা যায়।’’
অভিযোগপত্রের শেষে যাদবপুরের প্রাক্তনী সৌরভের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন স্বপ্নদীপের বাবা। লিখেছেন, ‘‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সৌরভের নেতৃত্বে হোস্টেলের অন্য ছেলেরা আমার বড় ছেলেকে অত্যাচার করে হোস্টেলের উপর থেকে নীচে ফেলে মেরে দেয়। আমি ওদের বিরুদ্ধে আইনত কঠোর ব্যবস্থা চাই।’’