টাইটানে মারা যাওয়া এই ধনকুবের কারা?
আটলান্টিক সাগরে ডুবে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যে পর্যটকরা টাইটানে চেপেছিলেন, তারা আর বেঁচে নেই বলে জানিয়েছেন আমেরিকান কোস্ট গার্ডের একজন কর্মকর্তা। নিখোঁজ পাঁচজন আরোহীই টাইটান সাবমার্সিবল ডুবোযানে করে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে চেয়েছিলেন।
টাইটান পরিচালনাকারী সংস্থা ওশেনগেটের এক বিবৃতি উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা ‘দুঃখজনকভাবে হারিয়েই গেছেন’। টাইটানিকের কাছে যে ধ্বংসাবশেষ মিলেছে, তা ডুবোযান টাইটানের বলে নিশ্চিত হওয়ার পরপরই এই বিবৃতি দেয় সংস্থাটি।
ওশেনগেটের বিবৃতি আসার পরপরই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন অনুসন্ধান অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া যুক্তরাষ্ট্র কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তা রিয়ার এডমিরাল জন মাগার বলেন, ওই পাঁচজনের লাশ হয়ত কখনও মিলবে না।
হারিয়ে যাওয়া টাইটানের ক্যাপসুলে ছিলেন পাঁচ পর্যটক, যার মধ্যে ওশেনগেইটের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টকটন রাশ (৬১), ব্রিটিশ ধনকুবের ও বিমান সংস্থা অ্যাকশন এভিয়েশনের চেয়ারম্যান হামিশ হার্ডিং (৫৮), পাকিস্তানের এংরো কর্পোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাদা দাউদ (৪৮) ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ (১৯) এবং ফরাসি পর্যটক পল অঁরি নারজিলে (৭৭)।
যানটির পরিচালক সংস্থা জানিয়েছে, যানটির আরোহী পাঁচ ব্যক্তি ‘সত্যিকার অর্থে ছিলেন অভিযাত্রী এবং অ্যাডভেঞ্চারের আসল উত্তেজনা ও আনন্দের তারা ছিলেন প্রকৃত ভাগীদার’।
একশ বছরের বেশি সময় আগে ডুবে যাওয়া টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ কানাডার কাছে আটলান্টিক মহাসাগরে পানির নিচে রয়েছে। হিসাব অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে ডুবোযানটিতে সংরক্ষিত অক্সিজেন শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। সেজন্যই তাদের বেঁচে থাকার আশা আর করার সুযোগ দেখছেন না সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
সে ধ্বংসাবশেষ পর্যটকদের দেখাতে গত রবিবার ডুব দেয় ডুবোযান টাইটান। ডুব দেওয়ার পৌনে ২ ঘণ্টার মাথায় টাইটানের সঙ্গে পানির উপরে থাকা নিয়ন্ত্রক জাহাজ পোলার প্রিন্সের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
তারপর থেকে খুঁজতে অভিযান চলছে। বৃহস্পতিবার সকালে টাইটানের খোঁজে একটি রিমোটলি অপারেটেড ভেহিক্যাল বা আরওভি আটলান্টিকের তলদেশে পৌঁছায়।
পানির তলদেশে চলাচলে সক্ষম ওই রোবট-যানটি কানাডার জাহাজ হরিজন আর্কটিক থেকে উত্তর আটলান্টিকের বিশাল এলাকাজুড়ে তল্লাশি চালাচ্ছে ট্রাকের আকারের ২২ ফুট দৈর্ঘ্যের টাইটানের সন্ধানে।
বৃহস্পতিবারওই রোবটযান টাইটানিকের কাছে কিছু ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করে। এরপর খবর আসে যে ওই ধ্বংসাবশেষ টাইটানের বহিরাংশ থেকে খুলে পড়া অংশ। তারপরই অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য জানাতে সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র কোস্ট গার্ড।
১৯১২ সালে ইংল্যান্ডের নিউ সাউদাম্পটন থেকে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে প্রথম যাত্রায় বিশাল আইসবার্গের ধাক্কায় ডুবে গিয়েছিল তখনকার সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ টাইটানিক, প্রাণ গিয়েছিল দেড় হাজার মানুষের।
দু’টুকরো হয়ে যাওয়া টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষটি রয়েছে আটলান্টিকের ৩ হাজার ৮০০ মিটার নিচে। ১৯৮৫ সালে ওই ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। আটলান্টিক মহাসাগরের এ এলাকাটি কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেইন্ট জোন্স থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণে।
মার্কিন কোস্ট গার্ড বলেছে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকালের দিকে ডুবে যাওয়া ঐতিহাসিক জাহাজ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে একটি এলাকায় কিছু ভাঙা বস্তুর সন্ধান তারা পান।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে আমেরিকার উপকূল রক্ষী বাহিনী আমেরিকান কোস্ট গার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মগার জানান, সমুদ্রতলে যেসব ভাঙা টুকরো পাওয়া গেছে সেগুলো টাইটান সাবমর্সিবলের অংশ বলে মিলে গেছে বলেই তাদের ধারণা।
টাইটান কীভাবে বিধ্বস্ত হল তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে যানটি তালিয়ে যাবার সময় তাতে আকস্মিক বিশাল একটি বিস্ফোরণ হয়েছে। তিনি বলেন ডুবোযানের ভেতর ব্যাপকভাবে চাপ কমে যাওয়ায় এই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে তাদের ধারণা।
তিনি বলেন, এর মধ্যে দুটি টুকরো রয়েছে; একটি হল টাইটানের টাইটানিয়ামের তৈরি সামনের ছুঁচলো মুখ এবং অন্যটি যানটির লেজের অংশ - যার থেকে ধারণা করা যায় ডুবোযানটি বিস্ফোরণে মাঝখান থেকে ফেটে যায়।
ডুবোযানটি নিখোঁজ হবার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেটির বিশাল অনুসন্ধান কাজ শুরু হয় যাতে অংশ নেয় আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটিশ এবং ফরাসি বিভিন্ন বাহিনীর উদ্ধারকারীরা।
রিয়ার অ্যাডমিরাল মগার বলেন যানটির পাঁচজন আরোহীর মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হবে কিনা এ বিষয়ে তার কাছে কোন উত্তর নেই। সমুদ্রের তলদেশের পরিবেশ অত্যন্ত বিপজ্জনক বলেও জানান এই কর্মকর্তা।