জাদুঘরে রাখা প্রদর্শনীর কলা খেয়ে ফেললেন এক শিক্ষার্থী
জাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য লাগানো শিল্পকর্ম থেকে একটি পাকা কলা খেয়ে ফেলেছেন এক শিক্ষার্থী। এমন ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের একটি জাদুঘরে। এই ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হলেও শিল্পকর্ম নষ্ট করার কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর উঠে এসেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত কলাটি ছিল একটি ‘শিল্পকর্ম’। যার নাম ‘কমেডিয়ান’। ‘উই’ নামে একটি প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে পাকা কলাটি টেপ দিয়ে সিউলের লেয়াম মিউজিয়াম অব আর্ট নামের জাদুঘরের দেয়ালে সেঁটে রাখেন শিল্পী মরিজিও কাতেলান। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, খেয়ে ফেলা কলাটির জায়গায় পরে নতুন আরেকটি কলা আটকে দেওয়া হয়।
প্রদর্শনীতে এই কলাটিকে অনেকেই আনন্দের বিষয় হিসেবে দেখলেও এটি খেয়ে ফেলেছেন নোহ হুইন-সো নামে দক্ষিণ কোরিয়ার এক শিক্ষার্থী। চলতি সপ্তাহে প্রদর্শনীতে গিয়ে সবার সামনেই দেয়াল থেকে কলাটি নিয়ে খেয়ে ফেলেন তিনি। এরপর টেপ দিয়ে খোসাটি আবার যথাস্থানে সেঁটে দেন।
এমনটা কেন করললেন এ ব্যাপারে শিক্ষার্থী বলেছেন, সকালের খাবার না খেয়ে বের হওয়ায় তিনি ক্ষুধার্ত ছিলেন। এ কারণেই তিনি ডাক্ট-টেপ দিয়ে আটকে রাখা কলাটি খুলে খেয়ে ফেলেছেন। পরে তিনি কলার খোসাটি আবার সেখানে সেঁটে দেন। তিনি নিজেও শিল্পকলা নিয়ে পড়ালেখা করছেন।
এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বিবিসির ইমেইলের কোনো জবাব দেয়নি। তবে তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে যে তারা ওই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করবে না। এমনিতেও প্রদর্শনীর ওই কলাটি দুই-তিন দিন পর পর বদলে ফেলা হয়। নো হুই-সু নামের ওই শিক্ষার্থী যখন কলাটি খাচ্ছিলেন তখন তার সঙ্গে থাকা এক বন্ধু ঘটনাটি ভিডিও করছিলেন। এক মিনিটের মধ্যেই তিনি কলাটি সাবাড় করে ফেলেন। পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি পোস্ট করেন।
ভিডিওতে তাকে উপস্থিত দর্শনার্থীদের উদ্দেশে 'এক্সকিউজ মি' বলেই কলাটির দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। এ সময় কেউ একজন তাকে সেটা না নেয়ার জন্য বলছিলেন। তবে নোহ সেদিকে কান না দিয়ে খোসা ছাড়িয়ে কলাটি খাওয়া শুরু করেন। তা দেখে আশপাশের সবাই স্তব্ধ হয়ে পড়েন। খাওয়া শেষে তিনি কলার খোসার পাশে কিছুক্ষণের জন্য স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে আবার চলে আসেন।
সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র নো হুই-সু পরে স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, শিল্পী মাউরিজিও ক্যাটেলানের এই শিল্পকর্মকে তিনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হিসেবে দেখেন। কিন্তু বিদ্রোহের বিরুদ্ধেও আরেকটি বিদ্রোহ হতে পারে।
তিনি বলেন, শিল্পকর্মের ক্ষতিসাধনকেও আরেক ধরনের শিল্পকর্ম হিসেবে দেখা যেতে পারে। আমি ভেবেছিলাম যে এটি আকর্ষণীয় হবে... এটি কি খেয়ে ফেলার জন্য সেখানে রাখা ছিল না?
শিল্পী ক্যাটেলানের শিল্পকর্মে পাকা কলার ব্যবহার এটাই প্রথম নয়। আর সেই কলা খেয়ে ফেলার ঘটনাও আগে আরেকবার ঘটেছিল। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে তার বিক্রি হওয়া ১ লাখ ২০ হাজার ডলারের শিল্পকর্ম থেকে পারফরম্যান্স শিল্পী ডেভিড দাতুনা একটি কলা খেয়ে ফেলেছিলেন। সেবারও শিল্পকর্ম নষ্ট করার ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তোলা হয়নি।