ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করলেও এখন দিনে আয় কোটি টাকা
যে বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করবেন ভেবেছিলেন, সেই বিষয়ের পরীক্ষা দিতে গিয়ে ফেল করেছেন। যে ব্যবসাই শুরু করেছেন, সেটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবুও বার বার ব্যর্থতার মুখে পড়েও হার মানেননি বিশ্বদীপ বজাজ। আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন, আবার লড়াই করেছেন।
আসল নামের চেয়ে বিশ বাজাজ নামেই বেশি পরিচিত বিশ্বদীপ। গোয়ালিয়রে জন্ম তাঁর। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, ইঞ্জিনিয়ার বা চিকিৎসক হবেন।
বিশেষ কোর্সে ভর্তিও হয়েছিলেন বিশ্বদীপ। পরীক্ষায় যে তিনি উত্তীর্ণ হবেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু তাঁর আশাভঙ্গ হয়। পরীক্ষায় পাশ করতে পারলেন না বিশ্বদীপ। পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার পর নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন বিশ্বদীপ। কী নিয়ে পড়াশোনা করবেন, কী নিয়েই বা কেরিয়ারে এগিয়ে যাবেন— কোনও বিষয় নিয়েই নিশ্চিত ছিলেন না তিনি।
অবশেষে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে স্নাতক হন বিশ্বদীপ। তার পর কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে পড়া শুরু করেন তিনি। পরীক্ষা চলাকালীন অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় আর পরীক্ষায় বসতে পারেননি। পরবর্তী পরীক্ষার জন্য আবার সাত মাস অপেক্ষা করতে চাইছিলেন না বিশ্বদীপ। তাই এমসিএ-র কোর্সে ভর্তি হয়ে গেলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করে এমসিএ নিয়ে ভর্তি হওয়ার কোনও নির্দিষ্ট কারণ ছিল না।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বিশ্বদীপ জানান যে, হঠকারিতার মধ্যে তিনি এমসিএ নিয়ে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, `আমার হঠাৎ মনে হল যে সিএ থেকে এমসিএ শুনতে বেশি ভাল লাগছে। তাই আমি ওই কোর্সে ভর্তি হয়ে যাই।'
এমসিএ নিয়ে পড়াশোনা করার পর প্রতিটি পরীক্ষাতেই ভাল ফল করেছিলেন বিশ্বদীপ। তার পর একটি সফটওয়্যার সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। সেখানে রেলের আসন সংরক্ষণ ব্যবস্থা পরিচালনার কাজে যুক্ত হন। কয়েক মাসের মধ্যেই কর্মক্ষেত্রে নিজের জায়গা তৈরি করে ফেলেন বিশ্বদীপ। নিজের উপর তাঁর এতটাই ভরসা তৈরি হয়েছিল যে, এক বছর সেখানে কাজ করে নিজস্ব একটি সংস্থা খুলে ফেলেন।
ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পসংস্থাগুলি কী ভাবে নিজেদের ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যাবে, সংস্থার তরফে সেগুলির সমাধান দিতেন বিশ্বদীপ। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিপুল টাকা উপার্জন করে ফেলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল না বিশ্বদীপের। নিজের লাভের পুরোটাই শেয়ার বাজারে ঢেলে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯৯২ সাল নাগাদ শেয়ার বাজার ডুবে যাওয়ার কারণে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে যান।
বিশ্বদীপের নিজের সংস্থাও বন্ধ হয়ে যায়। আবার নতুন করে কাজ শুরু করতে হয় তাঁকে। টানা ছয় বছর একটি সফটওয়্যার সংস্থায় কাজ করেন তিনি। টাকা জমানোর পর নিজস্ব স্টার্টআপ খোলেন বিশ্বদীপ। বিশ্বদীপের স্টার্টআপের তরফে বিভিন্ন ইন্টারনেট সংস্থাকে পরিষেবা দেওয়া হত। ইউরোপেও নিজের ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেওয়ায় ইউরোপে কাজ বন্ধ করে দিতে হয় তাঁকে।
বর্তমানে শুধুমাত্র ভারতের বিভিন্ন নামী সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন বিশ্বদীপ। ২০০৩ সালে গুরগাঁওয়ে একটি সংস্থা তৈরি করেন তিনি। বিভিন্ন সংস্থা থেকে তাদের ক্রেতাদের মধ্যে মেসেজের মাধ্যমে যে ভাবে সংযোগ স্থাপন করা হয় তা পরিচালনা করা বিশ্বদীপের সংস্থার দায়িত্ব।
এখনও পর্যন্ত আড়াই হাজার সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন বিশ্বদীপ। ২০১৮-১৯ সালে ব্যবসা থেকে ১৩.৪ কোটি টাকা লাভ করেছিলেন তিনি। সাম্প্রতিক অর্থবর্ষে বিশ্বদীপের মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এক সময় দেউলিয়া হয়ে নিজের ব্যবসা বন্ধ করে ফেলেছিলেন বিশ্বদীপ। এখন দিন প্রতি কোটি টাকা আয় করেন তিনি।