ঈদ-উৎসবে ঘটে পাহাড়-সমতলের মেলবন্ধন
দেশের তিন পার্বত্য জেলায় বসবাস ১৬ লাখেরও বেশি মানুষের। পাহাড়ে বাঙালি ছাড়াও চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, খেয়াং, চাক, খুমি, তঞ্চঙ্গা, বমসহ ১৪টি বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর বসবাস; জাতিগোষ্ঠীতে নানা পার্থক্য থাকলেও উৎসব-আয়োজনে তারা সবাই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিজেদের মতো করে। উৎসব-আয়োজনে জাতিগোষ্ঠীয় বিভাজনের বাইরে গিয়ে ধর্মীয় আবেশের বাইরে গিয়ে দেশের পার্বত্যাঞ্চলে ভিন্ন আবহে পালিত হয় মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। পাহাড়ে ঈদের উৎসব আর আনন্দ আয়োজন অনেকটা ভিন্ন রকমের হয় সমতলের তুলনায়।
সাধারণত পাহাড়ের যে কোন উৎসব ভরপুর থাকে আনন্দে এবং বৈচিত্র্যে। দেশের তিন পার্বত্য জেলায় বসবাস ১৬ লাখেরও বেশি মানুষের। তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় মিল রয়েছে শিক্ষা-দীক্ষায়, আচার-সংস্কৃতি এবং উৎসব-আয়োজনে। যেকোনো আচার-অনুষ্ঠানে একে অপরের পাশে থাকতে ও সহযোগিতা করতে ভালবাসেন এখানকার অধিবাসীরা। আর ঈদ-দুর্গাপূজা-সাংগ্রাই-বৈসু-বিজু-বিহু পার্বণগুলো যেন এখানকার সার্বজনীন রুপনেয়। যা পাহাড় আর শহরের আনন্দের ভিন্নতায় ঐক্যের জানান স্পষ্ট করে।
ঈদোৎসবে শহরের তুলনায় পাহাড়ে আনন্দ উদযাপনে বৈচিত্র্য ও ভিন্ন ধরনের অনুভূতি লক্ষ্য করা যায়। এখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন পুরোদমে ইদের আনন্দ যেভাবে খুশির আবেশে উপভোগ করে, তেমনি উপজাতি ও অন্য সম্প্রদায়ের মাঝেও সে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে কার্পণ্য করে না। এছাড়া পার্বত্যাঞ্চলের প্রতিটি ধর্মীয় উৎসবে পাহাড়ি-বাঙালি ছাড়াও অন্যান্য সম্প্রদায়ের উৎসবগুলো সবাই সমানভাবে উপভোগ করেন। সেটা হোক ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ঈদুল ফিতর-ঈদুল ফিতর, সনাতনীদের দুর্গাপূজা, খ্রিস্টানদের বড়দিন, ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাই, চাকমাদের বিজু নামে স্ব স্ব ধর্মীয় উৎসবগুলো মিলে মিশে আনন্দের সাথে পালন করে আসছে স্ব মহিমায়।
পাহাড়-সমতলের জনগোষ্ঠী অংশীজনরা উৎসবে-আয়োজনে এবং ধর্মীয় উৎসবে যার যার ধর্ম-মতে সকল সম্প্রদায়ের ধর্মপ্রাণ মানুষ ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একসঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেন। তাই-তো এ অঞ্চলের সকল ধর্মীয় উৎসবগুলো হয়ে উঠে সার্বজনীন উৎসব। স্থানীয়দের মতে, তিন পার্বত্য জেলায় রাজনৈতিক ও কিছু সুবিধা লোভী লোকদের কারণে মাঝে মাঝে পাহাড়ি-বাঙালিদের মাঝে জ্বালাও পোড়াও-সংঘাত হলেও ধর্মীয় উৎসবে তা দেখা যায় না; তাতে মনে হয় এ অঞ্চল যেন উৎসবের অঞ্চল।
ঈদ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলেও এ অঞ্চলে এটি সবার সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়। পাহাড়ে প্রায় অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবে পাহাড়ি-বাঙালিদের মাঝে উৎসবের আনন্দগুলো ভাগ করে নিতে দেখা যায়। শহরের ধর্মীয় উৎসবের আমেজের চেয়ে পাহাড়েরে উদযাপন বৈচিত্র্যের ও আনন্দের।
এখানকার বাঙ্গালি সম্প্রদায়ের লোকজন মনে করেন, পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালি তাদের যার যার ধর্ম, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে পালন করে আসছে। এসব ঐতিহ্যগুলো ভিন্ন ভিন্ন থাকলেও প্রধান ধর্মীয় উৎসবগুলো উদযাপন করে থাকে সম্প্রতির বন্ধনে আবন্ধ হয়ে। তাদের বিশ্বাস, এ অঞ্চলের মানুষ ধর্মীয় অনুভূতির দিক দিয়ে সবসময় শান্তি প্রিয়। আর ধর্মীয় উৎসবেও ভিন্নতা দেখা যায়। অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবে যেমন তারা অংশ গ্রহণ করেন, তেমনি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর লোকজনও ঈদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে এবং একে অপরের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। তাদের মতে, এটি যেন পাহাড়ের পাহাড়ি- বাঙালির সম্প্রতির সেতুবন্ধন।