‘প্রেমে পড়ার জন্য’ শিক্ষার্থীদের এক সপ্তাহের ছুটি চীনে
চীনে জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় উদ্বেগ ইতিমধ্যে উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। জন্মহার বাড়ানোর জন্য সরকারের রাজনৈতিক উপদেষ্টারা বিভিন্ন সুপারিশ করছেন সরকারের কাছে। সেজন্য বেশ কয়েকটি কলেজ জাতীয় উদ্বেগকে সমর্থন করার জন্য একটি ব্যতিক্রমী পরিকল্পনা নিয়েছে। চলতি এপ্রিল মাসে চীনের ৯টি কলেজ শিক্ষার্থীদের ‘প্রেমে পড়ার জন্য’ এক সপ্তাহ ছুটি দিচ্ছে।
এনবিসি জানিয়েছে, চীনের ৯টি কলেজ শিক্ষার্থীদের ‘প্রেমে পড়ার জন্য’ চলতি এপ্রিল মাসে এক সপ্তাহের ছুটি দিয়েছে। কলেজগুলো পরিচালনা করে ফ্যান মেই এডুকেশন গ্রুপ নামের একটি সংস্থা। গ্রুপটির নিয়ন্ত্রণাধীন অন্যতম একটি কলেজ মিয়ানিয়াং ফ্লাইং ভোকেশনাল কলেজ গত ২১ মার্চ ‘রোমাঞ্চ’কে উপলক্ষ করে বসন্তের ছুটি দেয়। ছুটি শুরু হয়েছে গতকাল ১ এপ্রিল থেকে আর শেষ হবে ৭ এপ্রিল।
মিয়ানিয়াং ফ্লাইং ভোকেশনাল কলেজের ডেপুটি ডিন লিয়াং গুওহুই এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমি আশা করি, শিক্ষার্থীরা সবুজ পানি ও সবুজ পাহাড় দেখতে যেতে পারবে। তারা বসন্তের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে। এতে শিক্ষার্থীদের সামনে এক নতুন দিগন্তই উন্মোচিত হবে না, বরং শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের বিষয়বস্তুকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
লিয়াং গুওহুই আরও বলেন, আমরা আশা করি, শিক্ষার্থীরা এই ছুটির সময়ে প্রকৃতিকে ভালোবাসতে শিখতে পারবে, জীবনকে ভালোবাসবে এবং ভালোবাসা উপভোগ করবে।
এই সময়ে শিক্ষার্থীদের হোমওয়ার্কও করতে হবে। হোমওয়ার্কের মধ্যে রয়েছে ডায়েরি লেখা, ব্যক্তিগত উন্নয়নের ট্র্যাক রাখা ও ভ্রমণের ভিডিও তৈরি করা।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ছুটির কারণে শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে না পড়ে, সে জন্য পরবর্তীকালে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া হবে। এ জন্য এখন শিক্ষার্থীদের প্রেম বিষয়ে মনোযোগী হতে বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনে জন্মহার অত্যধিক কমে যাওয়ার কারণে এবারের ছুটির থিম হিসেবে ‘ভালোবাসা’কে বেছে নেওয়া হয়েছে। চীন সরকার জনসংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজনে তরুণ প্রজন্মকে বিভিন্নভাবে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে।
১৯৮০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে আরোপিত এক-সন্তান নীতির মাধ্যমে চীন নিজের জন্য একটি জনসংখ্যা হ্রাসগত গর্ত খনন করেছে। কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালে সন্তান নীতির সংখ্যা বাড়িয়ে তিন করেছে। কিন্তু এখন বাড়িতে থাকার সময়েও, দম্পতিরা বাচ্চা নিতে অনিচ্ছুক। অল্পবয়সীরা সন্তান জন্মের বিষয়কে উচ্চ শিশু যত্ন ও শিক্ষা ব্যয়, স্বল্প আয়, দুর্বল সামাজিক নিরাপত্তা এবং লিঙ্গ বৈষম্যকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করে।
চলতি মাসে চীনের পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের (সিপিপিসিসি) বার্ষিক সভায় চীন সরকার জন্মের হার বাড়ানোর প্রস্তাবে বেশকিছু পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে।
গত বছর ছয় দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো জনসংখ্যা কমে যাওয়ার তথ্য দেখানোর পর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন তার জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য এসব প্রস্তাবকে ইতিবাচক লক্ষণ হিসেবে নিয়েছে। বার্ধক্য এবং ক্ষয়িষ্ণু জনসংখ্যাকে জরুরীভাবে বিবেচনা করছে।