সাদা খাতা জমা দিয়েও নিয়োগ, পশ্চিমবঙ্গে চাকরি গেল ৬১৮ শিক্ষকের

  © সংগৃহীত

কেউ জমা দিয়েছিলেন সাদা খাতা। কেউ পেয়েছিলেন ২ বা ৩ নম্বর। অথচ তারপরও উত্তরপত্র পরিবর্তন করে দিব্যি চাকরি করছিলেন স্কুলে। নবম-দশম শ্রেণির ওই শিক্ষকদের ওএমআর শিট যাচাই করে চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আবার পরে মামলাটি যখন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে ওঠে তিনিও এমন ৯৫২ জন শিক্ষকের মধ্যে কারচুপির অভিযোগে অভিযুক্ত ৮০৫ জনের চাকরি বাতিলের কথা বলেন। সোমবার তাদের মধ্যেই ৬১৮ জনের চাকরির নিয়োগপত্র বাতিল করল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।

এসএসসি আগেই এই শিক্ষকদের চাকরির সুপারিশ পত্র বাতিল করেছিল। তবে তারপরও চাকরি যাওয়ার নির্দেশকে সবরকম ভাবে ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন ‘অযোগ্য’ শিক্ষকেরা। নানাভাবে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের একক বেঞ্চের নির্দেশকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লাভ হল না। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ আজ শুক্রবার বিকেলে জানিয়ে দিল, চাকরি যাচ্ছেই। স্কুলের নবম-দশম শ্রেণির ৬১৮ জন শিক্ষককে আর স্কুলে যেতে হবে না।

নবম-দশম শ্রেণির মোট ৮০৫ জন শিক্ষককে ‘অযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এসএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র বা ওএমআর শিটে কারচুপি করে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ ছিল এই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। কলকাতা হাইকোর্টের একক বেঞ্চ এসএসসিকে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে এদের নিয়োগ বাতিল করতে বলেছিলেন। পরে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও সেই নির্দেশ বহাল রাখে। এর পরেই আজ সেই নির্দেশ কার্যকর করল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। নবম-দশমের উত্তরপত্রে কারচুপি করে চাকরি পাওয়া ৬১৮ জন শিক্ষকের নিয়োগপত্র বাতিল করে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ আজ একটি নোটিশ জারি করে জানিয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশানুসারেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে এই শিক্ষকদের নিয়োগের সুপারিশ পত্র বাতিল করে এসএসসি। নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ২০১৬ সালে নিযুক্ত শিক্ষকদের তালিকা থেকে ৮০৫ জন শিক্ষককে ‘অযোগ্য’ বলে গণ্য করা হয়েছিল। তার মধ্যেই ছিলেন এই ৬১৮ জন। এসএসসির সভাপতি সিদ্ধার্থ মজুমদার জানান, নির্দিষ্ট আইন মেনে ওই শিক্ষকদের সুপারিশপত্র বাতিল করা হচ্ছে। আপাতত প্রথম ধাপে ৬১৮ জনের চাকরি বাতিল করা হয়েছে। এসএসসি এ কথাও বলে যে, এই ৬১৮ জনের অনেকে সাদা খাতা জমা দিয়েছিলেন। আবার অনেকে দুই বা তিন পেয়েছেন পরীক্ষায়। তবে আপাতত এই ৬১৮ জনের সুপারিশ বাতিল করা হলেও, পরে আরও অযোগ্য প্রার্থীদের সুপারিশ বাতিল করা হবে।

এসএসসির সেই সিদ্ধান্তের পরই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন ওই ৬১৮ শিক্ষক। কারণ ততদিনে বিচারপতি বসুর চাকরি বাতিলের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টেরই ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছেন তারা। নির্দেশ বদলের আর্জি জানিয়েছেন। সুপারিশ বাতিলে আরও একটি মামলা করে এই শিক্ষকেরা জানতে চান, যেখানে এ সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন সেখানে সুপারিশ পত্র বাতিল করা হয় কিভাবে? এই মর্মে আদালতে আরও একটি মামলা করেন তারা।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত গত ১ মার্চ ডিভিশন বেঞ্চ চাকরি বাতিল নিয়ে বিচারপতি বসুর একক বেঞ্চের রায়কেই বহাল রাখে। আজ শুক্রবার সেই ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ৬১৮ জন অযোগ্য শিক্ষকের নিয়োগ পত্র বাতিল করল পর্ষদ।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা


সর্বশেষ সংবাদ