০৩ মার্চ ২০২৩, ১৬:৫০

জলবায়ু সুরক্ষায় তরুণ্যের সমাবেশ

জলবায়ু সুরক্ষায় তরুণ্যের সমাবেশ  © সংগৃহীত

ক্ষতিকর জীবাশ্ম ব্যবহার বন্ধ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের দাবি নিয়ে বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত এক সমাবেশে তরুণ জলবায়ু কর্মীরা জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়কর প্রভাবের কারণে বিশ্ব এখন জটিল সময় পার করছে, যা ইতোমধ্যে জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী মানবতার জন্য রেড অ্যালার্ট হিসেবে ঘোষণা করেছে। উন্নত দেশগুলোকে প্যারিস চুক্তি মেনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ এ সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। পাশাপাশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবসায় বিনিয়োগ না করে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে এখনই উদ্যোগী হতে হবে। এসময় তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্বন নিঃসরণ কমাতে উন্নত দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতির সমালোচনাও করেন।

শুক্রবার (৩ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশ করেন তারা। সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গের গড়ে তোলা স্কুল শিক্ষার্থীদের পরিচালিত আন্দোলন ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ এর বাংলাদেশ গ্রুপ ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এবং বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) যৌথভাবে এ জলবায়ু ধর্মঘটের আয়োজন করে। সমাবেশে সংগঠনটির তরুণ জলবায়ু কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

জলবায়ু সুরক্ষা ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের নবায়নযোগ্য শক্তির উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ, জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ এবং জলবায়ু সুবিচারের দাবি জানিয়েছে বরিশালের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা। দেশের ২৬টি জেলার তরুণ জলবায়ু কর্মীরা বিশ্বব্যাপী এই জলবায়ু ধর্মঘটের দাবিগুলোর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে। ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানি বিশেষ করে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) অর্থায়ন বন্ধ এবং এলএনজি আমদানি-নির্ভরতা কমাতেও সরকার এবং বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে সমাবেশে। এছাড়াও পরিবেশের ক্ষতি করে এমন প্রকল্পগুলো বন্ধ এবং জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ না করে টেকসই প্রকল্পে বিনিয়োগের আহ্বান জানান বক্তারা।

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য বায়ু দূষণ হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য এখনই জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। আমাদের মনে রাখতে হবে— জলবায়ু সংকট আর বায়ুদূষণ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই গ্রহজনিত সংকট মোকাবিলায় ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যবসায়িক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। 

ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান জানান, জীবাশ্ম জ্বালানিতে আমাদের নির্ভরতা কমানো যে কত জরুরি, সেটা বোঝার জন্য কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। জলবায়ু দুর্যোগজনিত ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবিলায় কাজ করার এখনই সময়। আমাদের অবশ্যই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি দূষণকারী দেশগুলো থেকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। জলবায়ু  এবং জ্বালানি সংকট শুধু একটি দুর্যোগই নয়, এটি আমাদের জন্য সতর্ক বার্তাও।

শিল্পোন্নত দেশগুলোর কাছে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর পক্ষে ন্যায়বিচার দাবি করে তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাদের ক্ষতিপূরণের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যথেষ্ট পরিমাণ আর্থিক তহবিলের ব্যবস্থা করে দ্রুত কৌশল বাস্তবায়ন করতে হবে। একইসঙ্গে নিঃশর্তভাবে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর আর্থিক ঋণও বাতিল করতে হবে।

জলবায়ু ধর্মঘটে তরুণ জলবায়ু কর্মীরা বাংলাদেশের চলমান বিদ্যুৎ সংকট ও আর্থিক বোঝার পেছনে ক্ষতিকর ও দামের দিক থেকে অস্থিতিশীল জীবাশ্ম জ্বালানি এলএনজি আমদানির প্রভাব উল্লেখ করে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সমালোচনা করেন। তরুণরা বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের আসন্ন বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য শক্তির অনুপাত উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।