‘জঞ্জালে রবীন্দ্র-ভাস্কর্যের মাথা’―আনন্দবাজারের প্রতিবেদন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি চত্বর থেকে উধাও হয়ে যাওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাস্কর্যের মাথা উদ্ধার নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে জনপ্রিয় ভারতীয় দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা। শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে পত্রিকাটি জানায়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বর থেকে উধাও হয়ে যাওয়া রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্যটির মাথা পাওয়া গেল খানিকটা দূরে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের এক কোণে, জঞ্জালের মধ্যে।’
প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার চারুকলা অনুষদের পড়ুয়াদের তৈরি প্রতিবাদী ভাস্কর্যটি ছাত্র ইউনিয়ন সংগঠনের পক্ষে বসিয়ে জানানো হয়, ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারি জুড়ে সেটি রাখা হবে। সন্ত্রাস-বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাশে পেরেক পোঁতা ‘গীতাঞ্জলি’ হাতে মাথা নিচু রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্যটি বসানো হয়। ছাত্রেরা ঘোষণা করেছিলেন, ‘রাষ্ট্র যে ভাবে নিপীড়নের মাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধা দিয়ে আসছে, সেই সেন্সরশিপ সংস্কৃতির প্রতিবাদ’ এই ভাস্কর্য। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভাস্কর্যটি উধাও হয়ে যায়। সারা দিন খোঁজ করে না-পেয়ে বিকেলে ছাত্রেরা একই জায়গায় একটি বড় মাপের ফেস্টুন টাঙিয়ে দেন, যাতে লেখা— ‘গুম হয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ’।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের খানিক দূরে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে মাঠের এক কোণে জঞ্জালের মধ্য থেকে ভাস্কর্যের মাথাটি উদ্ধার করা হয়। থার্মোকল ও পুরনো বইয়ের পাতা দিয়ে তৈরি ১৯ ফুটের রবীন্দ্রনাথের বাকি অংশ ভেঙে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়নের অভিযোগ, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নির্দেশেই ভাস্কর্যটি অপসারণ করা হয়েছে। রাষ্ট্র যে ভাবে স্বাধীন মতপ্রকাশকে বলপ্রয়োগে দমন করে আসছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও সেই পথেই ভাস্কর্য অপসারণ ও ধ্বংস করলেন।’
প্রসঙ্গত, চলমান সেন্সরশিপসহ নানা ধরনের সরকারি বাধার বিপক্ষে প্রতিবাদের রূপ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাশে স্থাপন করা হয়েছিল কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাস্কর্যটি। গত বৃহস্পতিবার সেখান থেকে ভাস্কর্যটি উধাও হয়ে যাওয়ার পর তার খণ্ডিত মাথা রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে উদ্ধার করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের পাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের একদল শিক্ষার্থীর উদ্যোগে গত মঙ্গলবার সেখানে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছিল। ভাস্কর্যটি সেখানে দেখা না যাওয়ায় ভাস্কর্যটি ‘গুম’ করা হয়েছে জানিয়ে এর প্রতিবাদে ‘গুম হয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ!’ লেখা একটি ব্যানারও সেখানে ঝোলানো হয়েছিল আয়োজকদের পক্ষ থেকে।
দেশে মুক্তচিন্তা, সৃজনশীলতা ও স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর কড়াকড়ি আরোপসহ সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ রবীন্দ্রনাথের এ ভাস্কর্যটি বাঁশ, থার্মোকল ও বইয়ের কাগজ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। ভাস্কর্যে পেরেক-বিদ্ধ ‘গীতাঞ্জলি’ হাতে বিষণ্ণ মুখে দাঁড়িয়ে থাকা রবীন্দ্রনাথের মুখে ছিল টেপের বাঁধন। লেখক, শিল্পী ও সাংবাদিকসহ দেশের সব পর্যায়ের মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধা এবং কড়াকড়ির প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথের এই ভাস্কর্যটি চলতি ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে রাখার পরিকল্পনা ছিল উদ্যোক্তাদের। ভাস্কর্যটি তৈরির এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বামপন্থী ছাত্র-সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরাও।