তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের এক মাসের বেতন দেওয়া হবে ভূমিকম্প দুর্গতদের
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প দুর্গতদের সহায়তায় নিজেদের এক মাসের বেতন পাঠাবেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই। স্বশাসিত দ্বীপটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) জানিয়েছে, তাইপে ইতোমধ্যেই আঙ্কারাকে কিছু ত্রাণ পাঠিয়েছে, কিন্তু সাই ও লাইয়ের বেতন এর বাইরে ছিল।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, দ্রুত দেশ পুনর্গঠনে তাদের দেওয়া সহায়তা তুরস্কের কাজে লাগবে। এর আগে লাই ও লাই গত বছর তাদের এক মাসের বেতন দান করেছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেইনের মানবিক ত্রাণ তহবিলে। সাইয়ের এক মাসের বেতন ৪ লাখ তাইওয়ানি ডলার, যা ১৩ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলারের সমান।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী বছর তাইওয়ানে হতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাই ও লাই, উভয়েরই অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। অন্যদিকে ভূমিকম্প মোকাবেলায় তার সরকারের প্রথম দিককার কর্মকাণ্ডে কিছু সমস্যা ছিল বলে স্বীকার করে নিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান।
সোমবার তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে বহু ভবন ধসের ঘটনায় তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তবর্তী ঐ এলাকায় এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৫ হাজার মানুষের। যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ঐ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। তীব্র ঠাণ্ডা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি না থাকাসহ নানা কারণে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার তৎপরতা। এর মধ্যেই বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা নেমে হিমাঙ্কের কাছাকাছি চলে গিয়েছে। এঘটনায় এখন পর্যন্ত আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে অন্তত ৪০ হাজার মানুষের।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গাজিয়ানতেপের কাছে এ ভূমিকম্প হয়। কম্পন অনুভূত হয়েছে প্রতিবেশী সিরিয়া, লেবানন ও সাইপ্রাসেও। এএফএডির কর্মকর্তা ওরহান তাতার জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে ৫৭৭৫টি ভবন ধ্বংস হয়েছে, এ পর্যন্ত ২৮৫টি পরাঘাত হয়েছে এবং সব-মিলিয়ে ৪০ হাজান জন আহত হয়েছেন।
আর তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত মোতায়েন করা হয়েছে ১৩৭৪০ জন উদ্ধারকর্মী এবং ৪১ হাজারেরও বেশি তাঁবু, এক লাখ বিছানা ও তিন লাখ কম্বল পাঠানো হয়েছে দুর্গত এলাকাগুলোতে। জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) বলছে, স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ভূমিকম্পটি শুরু হয়ে প্রায় এক মিনিট স্থায়ী হয়। এর উৎপত্তি গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার (১১ মাইল) গভীরে।
অন্যদিকে জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্স (জিএফজেড) বলছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তি তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কাহরামানমারাসের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার (৬ মাইল) গভীরে। সুনামির সম্ভাবনা পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে বলে ইএমএসসি মনিটরিং সার্ভিস জানিয়েছে।
আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশঙ্কা করছে, মৃতের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। সংস্থার কর্মকর্তাদের অনুমান, নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াতে পারে। এই ভূমিকম্পে মোট দুই কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে। বিভিন্ন দেশকে দ্রুত দুর্যোগ অঞ্চলে সাহায্য পাঠানোর আহ্বানও জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়েছে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা ও দেশটির অন্যান্য শহরের পাশাপাশি পুরো অঞ্চল-জুড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলেছে, স্থানীয় বাসিন্দারা প্রচণ্ড শীতের মধ্যে তুষারে ঢাকা রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়েছেন ভূমিকম্পের তীব্রতায়। ভূমিকম্পে বহু ভবন ধসে পড়েছে আর এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপে বহু মানুষ আটকা পড়েছে বলেও খবর আসছে।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোইলু জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে গাজিয়ানতেপ, কাহরামানমারাস, হতাই, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালাটিয়া, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির ও কিলিস-এই ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, ভূমিকম্পে আলেপ্পো প্রদেশে বহু ভবন ধসে পড়েছে। আর দেশটির হামা প্রদেশের বেসামরিক পরিষেবার একটি সূত্র রয়টার্সকে বলছে, সেখানেও বেশকিছু ভবন ধসে পড়েছে।
বিভিন্ন সময় ভূমিকম্পের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়া স্বশাসিত দ্বীপটি ঘোষণা দিয়েছে তুরস্কের ভূমিকম্প দুর্গতদের ২০ লাখ ডলার ত্রাণ দেওয়ার। পাশাপাশি ভূমিকম্পদুর্গত এলাকায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া জীবিতদের উদ্ধারে চলা কার্যক্রমে সহায়তায় করতে তারা দুটি উদ্ধারকারী দলও পাঠিয়েছে।
তাইওয়ানে হওয়া ১৯৯৯ সালে এক শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর আন্তর্জাতিক তৎপরতায় অংশ নিয়েছিল তুরস্কও। সে সময় তাইওয়ানে উদ্ধারকারী দল পাঠায় তারা। ভূমিকম্পে তখন দ্বীপটির দুই হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ যায়। বিশ্বের অনেক দেশের মতো তুরস্কেরও তাইওয়ানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও দুই পক্ষই একে অপরের রাজধানীতে দূতাবাস সমপর্যায়ের কার্যালয় খুলে রেখেছে। এছাড়াও সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনাও করে তাইপে ও আঙ্কারা।