স্কুল জীবনে পরিচয় হয় নূরা ও নাসারিনের
আধিলা নাসারিন ও ফাতিমা নূরা আলোচনায় এসেছিলেন চলতি বছরের শুরুর দিকে। যখন অভিভাবকরা জোর করে আলাদা করার পর ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার একটি আদালত তাদের এক করে দিয়েছিলো। তখন তারা দুজন তাদের পরিবার থেকে বেরিয়ে আসার পর যেসব সমস্যার মুখে পড়েছিলেন তার প্রতিকার চাইতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
এখন গত মাসে তারা আবারো সংবাদ শিরোনাম হলেন। এবার তারা বিয়ের ছবি প্রকাশ করলেন যেখানে ওই জুটি বিয়ের কনের সাজে ছবি তুলেছেন। রূপার অলংকারের সাথে বাদামী ও গাড় নীল রংয়ের লেহেঙ্গা পরে তারা বিয়ের আংটি আর গোলাপ বিনিময় করেছেন সাগর সৈকত।
২৩ বছর বয়সী মিস নুরা ‘বিয়ের ছবি’ফেসবুকে প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘এচিভমেন্ট আনলকড: টুগেদার ফরএভার’। এরপর থেকেই অভিনন্দন বার্তায় সিক্ত হচ্ছেন তারা।
নাসারিন বলেন, আমরা শুধু ফটোশ্যুটের চেষ্টা করেছি কারণ আমাদের কাছে এই আইডিয়াটা চমৎকার মনে হয়েছে। আমরা এখনো বিয়ে করিনি। তবে একটা পর্যায়ে আমরা তা করতে চাই। দুই নারীই বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবির জন্য পোজ দিয়েছেন।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট প্রায় এক দশকের আইনি বিতর্কের পর ২০১৮ সালে বলেছে যে সমকামী বিয়ে কোনো অপরাধ নয়। কয়েক বছর ধরে সচেতনতা বাড়ছিলো। কিন্তু তারপরেও সমাজে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সমস্যার মুখেই পড়তে হয় এই কমিউনিটির সদস্যদের।
আরও পড়ুন: টকশোতে হাস্যকর মন্তব্য করেছেন তিন মূর্খ সাংবাদিক: তসলিমা নাসরিন
নুরা ও নাসারিনও এমন পরিস্থিতির সাথে পরিচিত। এই জুটি বলছে মিস নুরার পরিবার থেকে এখনও হুমকি আসছে। ভারতে সমকামী বিয়ের আইনি ভিত্তি নেই। তবে দিল্লি হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে বৈধতার আবেদনগুলো বিবেচনাধীন আছে। এর মধ্যে বেশ কিছু সমকামী জুটি কিছু অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে।
নুরা ও নাসারিন কেরালার আদালত থেকে এক সাথে থাকার অনুমতি পেয়েছেন। কিন্তু ভারতের অন্য বিবাহিত দম্পতিরা যেসব সুবিধা ও অধিকার ভোগ করেন তেমনটি তাদের নেই।
নাসারিন বলেন, আমরা যদি কোনো ফর্ম পূরণ করতে যাই তাহলে তারা জানতে চায় স্ত্রী, স্বামী বা বাবার নাম। আমার কর্মক্ষেত্র বা অন্য জায়গাগুলোতে আমি এখনো বাবার নামই ব্যবহার করি। আমরা সম্প্রতি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে বাবার নাম দিতে হয়েছে। এটা হতাশা জনক।
এটাও কখনো কখনো তাদের জন্য কঠিন কারণ তাদের পরিবারের সাথেও সম্পর্কটা সবসময় সুখকর নয়। হাইস্কুলে থাকার সময় নূরা ও নাসারিনের পরিচয় হয়। পরিচয়ের মাধ্যমে একে অন্যের ঘনিষ্ঠও হন। পরে তিন বছর বিচ্ছিন্ন ছিলেন তাদের পরিবার বিভিন্ন জেলায় থাকা ছাড়াও কলেজের পড়াশোনা শেষ করার জন্য।
তখন তাদের সমর্থক গোষ্ঠীগুলো পরামর্শ দিয়েছিলো যে শিক্ষা শেষ করে চাকরিতে যাও আগে। নাসারিন বলছেন তারা জানতেন যে তাদের একত্র হওয়াটা রক্ষণশীল পরিবারের জন্য মেনে নেয়া কঠিন । এই জুটি বলছেন যে সমর্থন তারা মানুষের কাছ থেকে পেয়েছেন তাতে তারা উদ্বেলিত। নাসারিন বলেন, এখন মাস্ক পড়লেও লোকে আমাদের চিনতে পারে। [সূত্র: বিবিসি বাংলা]